rohinga

মনে রাখুন-

১। আপনি যদি বাংলাদেশী বা বাঙালী হন তবে আপনার মত হাজারো লোক সাগরে না খেয়ে ডুবে বা অন্য কোথাও মরলেও আপনার দেশ বা স্বজাতি আপনার পাশে দাঁড়াবে না। বরং মৃত্যুর পর আপনার লাশ নিয়ে অনেক তদন্ত হবে অনেক রাজনীতি হবে। আপনার ও আপনার প্রিয়জনদের আপনাকে হারানোর কষ্টের অশ্রু ঘৃনায় রুপান্তরিত হবে রাজনীতির দৌরাত্বে, শাসকদের হয়রানিমূলক কর্যক্রমে ও উদ্ভট তথ্যে। হয়তবা যে আপনাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসত তারই জেল বা ফাঁসি হতে পারে আপনাকে হত্যার বা আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে।

 

২। আপনি যদি যে কোন দেশের মুসলিম হন তা হলে আপনার মত লাখো লোক চাপিয়ে দেয়া যোদ্ধে, বোমার আঘাতে, দূর্ভিক্ষে বা সাগরে দিনের পর দিন না খেয়ে মরলেও আপনার দেশ, স্বজাতি এমনকি পৃথিবীর কোন জাতি বা দেশ আপনার পাশে দাঁড়াবে না এবং আপনার জন্য এক ফোটা চোখের অশ্রুও বিসর্জন দিবে না। কোন লোক দেখানো তদন্ত বা রাজনীতিও হবে না মিডিয়াগুলিতে আপনাদের জন্য কান্নাকাটি শুনব না, তবে শুনা যাবে কয়েকলক্ষ মৌলবাদি ইসলামী জঙ্গী সন্ত্রাসী ধ্বংস্বাত্বক কার্যকলাপের প্রচেষ্টা কালে নিহত। যদিও আপনারা শক্রু মিত্র কাউকেই জীবনে কখনো হাত দিয়ে থাপ্পর পর্যন্ত দেন নাই। এ শতাব্দীতে মুসলমানদের ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীর সংঙ্ঘা অন্যরকম এবং অলিখিত। আর আপনার রেখে যাওয়া পরিবার পরিজনদের এই হারানোর বেদনা কোন দিন শেষ হবে না। বরং একের পর এক বিসর্জনে কষ্টের অংক আরো বেড়েই চলবে এবং তা তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। 

 

৩। আপনি যদি যে কোন দেশের অমুসলিম এবং সাধারন লোক বা ধার্মিক হন তাহলে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ ও জাতি (মুসলমান সহ) যে কোন বিপদে আপনার পাশে থাকবে।

 

৪। আপনি যদি যে কোন দেশের নাস্তিক হন বিশেষ করে ইসলাম বিরোধী তাহলে আপনাকে বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য পৃথিবীর সকল দেশ ও জাতি (মুসলমান সহ) প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হবে। সুস্থথাকলেও লোক দেখানো কোনরুপ আশংখা দূর করার জন্য আপনাকে ICU'তে রাখা হবে। অথবা কারন বসত মৃত্যুর পর অনাবিষ্কৃতি উপাধি ও সম্মানে ভূষিত হবেন। মিডিয়াগুলি বছরের পর বছর কান্নাকাটি করে আপনাকে জীবিত রাখবে। সহস্র বছর আদর্শ মানুষদের পাশে আপনার নাম লিখা থাকবে।

 

এবার আসি অন্য কথায়- 

১৫শতকেও আমেরিকানরা ছিল বিবস্ত্র এবং জংলী। ১৪৯২ সালে আমেরিকার সন্ধান পাওয়া যায় এবং তার অনেক বছর পরও সেখানে সভ্যতার ছোঁয়া পৌছায় নি। তারা ছিল একপ্রকার বনমানুষ। অপরদিকে তখন বাংলায় চলছিল মুসলমান সুলতানদের অধীনে গৌরবউজ্জল শাসন। চলুন বাঙালী হিসেবে আরও আগে ফিরে যাই। ১৫শতক থেকে আরও ৫০০ বা ১০০০ বছর আগে। তখন ছিল বৌধ্যদের শাসনআমল। তখনকার সময়ও ছিল এই বঙ্গভূমির সোনালী, সচ্ছল ও সুশাসনের সময় যদিও তখন আজকের পশ্চিমা সভ্যদের গায়ে পোষাক তো দূরের কথা চামড়া ছিল কিনা সেটা নিশ্চিত করার জন্য কোন প্রত্নতত্ববিদ আজও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তখনকার বাঙালিদের চলনে, পোষাকে, খাবারে, ধর্মে-কর্মে, হিন্দু, মুসলিম, কি বৌধ্য সবার মাঝে সবজায়গাতেই ছিল আভিজাত্য। সেই জংলী বিবস্ত্র পশ্চিমা বানর আজকের আধুনিক সভ্যতার জনক, পশ্চিমা সংস্কৃতির ধারক, বাহক, সভ্য মানুষ হয়ে গেল আর আমরা বাঙালীরা নিজেদের সংষ্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, আভিজাত্য বিসর্জন দিয়ে দিন দিন ডারউইনের মতবাদ উল্টিয়ে মানুষ থেকে জংলী বানর হয়ে যাচ্ছি।

man2monkey

আর মুসলমানদের কথা কি বলব। যাদের ধর্মের মূলবানীই হচ্ছে পরকালের শান্তির জন্য আল্লাহর উপাসনা কর, সৃষ্টির সেবা কর হতে পারে সে মুসলিম অমুসলিম কিংবা অন্য প্রানি, বিপদে ধৈর্য্য ধর, দান কর, যাকাত দাও, আশ্রয় প্রার্থীকে আশ্রয় দাও এধরনের আরও অনেক শান্তির বানী। সেই মুসলমানরাই আজ ইসলামের মূল ভ্ত্তিতে নেই। স্বজাতিকে আশ্রয় ও সেবা তো দূরে থাক স্বজাতি হত্যায় আজ মুসলমানদের হাতও রক্তে রঙিন। বৃহত্তর পরিসরে পরজাতি সেবা যেটুকু দৃশ্যমান হয় সেটাও মঞ্চস্থ, আত্মঘাতী এবং ব্যার্থ অশুভ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য।

Bangla1500

সুতারাং সাধারন বাঙালী এবং সাধারন ও ধর্মপ্রান মুসলমান বাজে অপবাদ নিয়ে মরবে এটাই স্বাভাবিক। কোন সু-অভ্যাস বা অধ্যাবসায় দিয়ে এই বৃত্ত থেকে বেড় হয়ে আসা আর সম্ভব নয় কারন সে সময় পার হয়ে গেছে। এই বৃত্তের দেয়াল ভাঙার জন্য এখন শুধু একটি বিপ্লবের অপেক্ষায়। আপনি আমি বা নেতা কেউই সেই প্রত্যাশিত বিপ্লব ঘটাতে পারবে না কারন মানুষ চাইলেই বিপ্লব ঘটাতে পারে না। ‘সময়’ তার নিজের প্রয়োজনে নিজেই জেগে উঠে, বিপ্লব ঘটায় যেটা সহস্র বছরের মধ্যে বাংলাদেশে ঘটিয়েছিল ১৯৭১ সালে, ভারত বর্ষে ১৯৪৭ সালে আর মুসলিম বিশ্বে মধ্যযুগের প্রথম দিকে।

golden time in BD

 

‘সময়’ মহাকাল ধরে সরল পথে বহমান। ‘সময়’ সরল সততা, যোগ্যতা, মেধা ও শ্রমের দাসত্ব করে, এটাই তার ধর্ম। তাকে জোরপূর্বক শৃঙ্খলিত করে গোলাম বানিয়ে কোন ব্যাক্তি, জাতি, গোষ্ঠী দীর্ঘ দিন আটকে রাখতে পারে নি, পারবেও না। সে প্রয়োজনমত শিকল ভাঙবে, বন্ধনমুক্ত হবে। সেই সাথে সে তার প্রকৃত রুপ ধারন করবে, শৃঙ্খলকারীদের উপর ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ নিবে। সে সৃষ্টিকে উলট পালট করার ক্ষমতা রাখে। ‘সময়’ শৃঙ্খলিত হয়ে যে বীরের দাসত্ব করে সেই ‘সময়’ই আবার জেগে উঠে সেই বীরকেই নিশ্চিন্ন করে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। আজ যে ‘সময়’ শৃঙ্খলিত হয়ে অত্যাচারীর কথা বলছে তা এক দিন স্ব-রুপে ফিরে মুক্ত হয়ে দাসত্ব করবে তাদের যারা সততা, যোগ্যতা, মেধা ও শ্রম নিজেদের মধ্যে ধারন করে। ‘সময়’ শৃঙ্খলিত হয় তখনি যখন প্রকৃত মনিব তাকে ধরে রাখার যোগ্যতা হারায়। আবার যখন জেগে উঠে তখন ভয়ঙ্কর রুপ ধারন করে।

destroyed

আজ যে ‘সময়’ শৃঙ্খলিত হয়ে শৃঙ্খলকারীদের ভাষায় কথা বলছে মুক্ত হয়ে একদিন সে নিজের ভাষায় কথা বলবে ঠিক পূর্বের মত। যে ‘সময়’ ক্ষুদিরামকে হত্যাকারী সন্ত্রাসী বলে ফাঁসিতে ঝুলায় সেই ‘সময়’ই স্ব-রুপে ফিরে সেই ক্ষুদিরামদেরকে জাতীয় বীরের স্বীকৃতি দিয়ে বীরদের আদর্শের আসনে অধিষ্ঠিত করে।

times movement

আমাদেরই ব্যার্থতায় ‘সময়’ আজ শৃঙ্খলিত। মহাকাল ও তার ইতিহাস’ই ‘সময়’এর শৃঙ্খলিত হওয়ার এবং ভয়ঙ্কর পটপরিবর্তনের স্বাক্ষী। ‘সময়’কে আপনার আমার জাগাতে হবে না, শৃঙ্খলকারীরাই তাকে খুঁচিয়ে জাগাচ্ছে। সে খুব শীঘ্রই ফিরছে তার স্বীয় রুপে- অপেক্ষা করুন, ধৈর্য্য ধরুন, সৎ হোন, পরিশ্রম করুন আর টিকে থাকুন। মনে রাখবেন কখনো কখনো টিকে থাকাই চরম স্বার্থকতা যদি সেটা হয় দীর্ঘ... মুক্তির... অপেক্ষায়....।

tawhid

লেখক পরিচিতি
এম, এইচ, মিনহাজ
আমি বিভিন্ন বাংলা/ইংরেজী ব্লগের একজন অনিয়মিত এবং সখের ব্লগার। তবে নিয়মিত লেখার ইচ্ছে থাকলেও অনিয়মিত ভাবেই পাঠকদের বিরক্ত করে থাকি। আমার লেখার বিষয়বস্তু- যা মনে আসে তাই। কারও কাছ থেকে বাহবা পাওয়ার জন্য লিখি না। কেউ আমার লেখা পছন্দ করলে খুশি হই তবে অপছন্দ করলেও লেখালেখি বন্ধ করার কোন অবকাশ নেই, কারন আমি একান্ত সখের বশেই লেখালেখি করি।
আমার ব্লগ সমুহ:

আপনার মতামত দিন