কয়নটম কমপউটরর

কোয়ান্টাম কম্পিউটারের পেছনে ধারণাটা অনেক সহজ সরল । আমাদের পারিপার্শ্বের দিকে তাকালে আমরা একটি বস্তুকে দেখতে পাই একটি নির্দিষ্ট অবস্থায় দেখতে পাই ।একই সাথে দুইটি অবস্থায় একটি বস্তু থাকতে পারেনা । কিন্তু পরমাণুর প্রোটন এবং ইলেকট্রন একই সাথে ঘড়ির কাটার দিকে এবং ঘড়ির কাটার উল্টোদিকে ঘুরতে পারে অথবা একই সাথে ভিন্ন শক্তিতে অবস্থান ধারণ করতে পারে ।

 

আমাদের দৃশ্যমান এই বিশ্বে সব কিছুই নিয়ম শৃংখলা অনুযায়ী চললেও কোয়ান্টাম বিশ্বে ব্যপারটা ঠিক উল্টো । এখানে সব কিছুই বিশৃঙ্খল । এতেই শেষ নয় । কখনো যদি দুটি কণা এক সাথে মিলে যায় তাহলেই ঘটবে ভুতুড়ে ঘটনা । যদি একটি কণার উপর পরিবর্তন আনা যায় তাহলে তাঁর প্রভাব পড়বে অন্যটির উপর যা সজ্জাকরণ ও সুপারপজিশন নামে পরিচিত । এই সজ্জাকরণ ও সুপারপজিশন কম্পিউটার এর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হলে এক অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর হয়ে উঠে কম্পিউটার । এই কম্পিউটার গুলোকেই বলা হয় কোয়ান্টাম কম্পিউটার ।

সাধারণ কম্পিউটারগুলোতে যেগুলো আমরা ব্যবহার করি সেগুলো ০,১ দিয়ে হিসাব করে কাজ করে । সার্কিটে নির্দিষ্ট ভোল্টেজের উপস্থিতি হল ১, আর অনুপস্থিতি হল ০ । আর এই ০ আর ১ হল এই সাধারণ কম্পিউটারের তথ্যের একক যাকে বলা হয় বিট ।

কোয়ান্টাম কম্পিউটারে তথ্যের একক হল কিউবিট । সেই কিউবিট একটি ইলেকট্রন হতে পারে,একটি ফোটন হতে পারে,একটি ডায়মন্ডের অণুও হতে পারে ।কোয়ান্টাম মানেই হল কোন কিছুর ক্ষুদ্রতম অংশ ।

কোয়ান্টাম লেভেলের কনিকাগুলোর একটা কোয়ান্টাম স্পিন থাকে যা সাধারণ বিজ্ঞানের ঘুর্ণন থেকে আলাদা । কিন্তু যেসব কণার স্পিন মান ১/২ সেসব তাদের ক্ষেত্রে আমরা কণাটা দান দিকে অথবা বাম দিকে ঘুরছে এরকম কল্পনা করে নিতে পারি ।

যদি আমরা সুহজভাবে চিন্তা করি তাহলে আমরা ভাবি যে যদি ডানে ঘুরে তাহলে কিউবিটের মান ১ আর বামে ঘুরলে কিউবিটের মান ০ । তারপর কম্পিউটারে অনেকগুলো কিউবিট রেখে দেব যাদের স্পিন মেপে আমরা ০ আর ১ দিয়ে গুনব আর এইটাই কোয়ান্টাম কম্পিউটার । কিন্তু আসলে তা না একটা কিউবিট বামে ডানে ঘুরছে ,উপরে না নিচে ঘুরছে নাকি দুইদিকেই এক সাথে ঘুরছে তা বলা যায়না । কারণ কিউবিটে একই সাথে ০ আর ১ নেই আছে দুইটি মানের একটি সংমিশ্রণ । একে বলা হয় সুপারপজিশন । আমরা কল্পনাও করতে পারিনা কিভাবে একটি গোলক ডানে বা বামে ঘুরবে কিন্তু বাস্তবে এটাই হয় ।

ধরা যাক একটি কিউবিট সুপারপজিশনে আছে ০ আর ১ এর মাঝের অবস্থানে এবং এটি আরেকটি কিউবিটের সাথে একই সাথে প্রতিক্রিয়া করছে তখন আমরা চারটা ফল পেতে পারি ১/১,১/০,০/১,০/০ ।

যদি আমরা সুপারপজিশনে থাকা কণিকাটি কোন দিকে ঘুরছে তা দেখার চেষ্টা করি সাথে সাথে এটা যে কোন দিকে ঘোরা শুরু করবে বা কোন দিকে ঘুরবে এটা জানার কোন উপায় নেই । যদি আমি দেখি যে এটা বাম দিকে ঘুরবে তাঁর মানে এই না যে এটা বামেই ঘুরবে,আমি দেখার পরে এটা বামেও ঘুরতে পারে । এতার সম্ভাব্যতা বলা যায় কিন্তু নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায়না ।

এনট‍্যাঙ্গলমেন্ট কোয়ান্টাম কম্পিউটারের একটি গুরুত্বপুর্ণ অংশ । দুটি জিনিস পরস্পরের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হলে এদেরকে এনট‍্যাঙ্গলড হয়ে আছে বলা হয় ।

যদি দুইটি কিউবিট যদি দুইদিকে ঘুরছে বলে দেখা যাচ্ছে । পরবর্তীতে একটা সময় যখন একটি কিউবিট যে কোন একদিকে ঘোরা শুরু করল তখন অপর কণাটিও ওইদিকে ঘোরা শুরু করবে । যদি এটা লাখ লাখ আলোকবর্ষ দুরেও হয় তাহলেও এটা ঘটবে ।

এনট‍্যাঙ্গলমেন্ট ব‍্যাপারটা অবিশ্বাস‍্য হলেও কল্পনা না, বিজ্ঞানীর দুটি ল‍্যাবে বসে পরীক্ষা করে দেখেছেন সত‍্যিই এটা ঘটে থাকে। এনট‍্যা্ঙ্গলমেন্ট ব‍্যবহার করে কিউবিট “টেলিপোর্ট” করে  দেয়া সম্ভব, তারমানে কণিকাটা বাতাস বা ভ‍্যাকুয়াম বা অন‍্য কোনো মাধ‍্যম দিয়ে না পাঠিয়েই জাদুর মত আরেকজায়গায় পাঠিয়ে দেয়া যায়।

তবে আইনস্টাইন বলেছিলেন আলোর গতিকে কখনো অতিক্রম করা যাবেনা, এদিকে আমি বলছি এনট‍্যাঙ্গলমেন্ট দিয়ে ১০০০০ আলোকবর্ষ কিউবিট দূরে টেলিপোর্ট করে দেয়া সম্ভব, তাহলে নিশ্চয় এটা ভূল। আসলে এনট‍্যা্ঙ্গলমেন্ট হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরে ঘটলেও কোন তথ‍্য চলে যায় না কারণ সবকিছু “সম্ভাব‍্যতা” অনুযায়ী হচ্ছে।টেলিপোর্ট করে তথ্য পাঠানো যায়,কিন্তু সেক্ষেত্রে সেই তথ্য পড়ার জন্য কিছু সাধারণ বিটও পাঠিয়ে দিতে হয় গন্তব্যে,সেটা আলোর গতি অতিক্রম করেনা । তাই তথ‍্য এখানে আলোর গতি অতিক্রম করছেনা, সিনেমার মত টেলিপোর্ট করে নিমেষেই অন‍্য গ‍্যালাক্সিতে চলে যাবার আশা করে থাকলে হতাশ করতে হচ্ছে।

আমরা এখন যে কম্পিউটার ব্যবহার করি তাঁর তথ্য সংরক্ষন করা হয় বিটের মাধ্যমে । এই বিট শুধুমাত্র দুটি অবস্থা ০ আর ১ দাহহ্রন করতে পারে । যেমন ডেসিমাল ১০ এর বাইনারি রুপ ১০১০ যা সংরক্ষনে ব্যবহৃত হয় ৪ রেজিস্টার ।

অন্যদিকে প্রতিটি কিউবিট একাধিক অবস্থা ধারণ করে রাখতে পারে ।প্রতিটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার ক্যালকুলেশন ও মেমোরির দিক দিয়ে হবে বিশাল ক্ষমতার অধিকারী । একটি অতি মাইক্রোচিপ সংরক্ষন করে রাখতে পারবে লক্ষ কোটি টেরাবাইট তথ্য । একই সাথে সমাদাহ্ন করতে পারবে লক্ষ লক্ষ তথ্যের নির্ভুল গণনা ।তখন আজকের এই কম্পিউটারের গতিকে অনেক তুচ্ছ মনে হবে । আসবে কম্পিউটার জগতে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন ।

লেখক পরিচিতি

আপনার মতামত দিন