medical test for gentsআশা করি আপনি সুস্থ সবল একজন পুরুষ। তারপরও রোগ বালাইয়ের শেষ নেই। দেহে কখন কোন রোগ বাসা বাঁধে তা বলা যায় না। তাই কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত নিজ উদ্যোগে। চিকিৎসকদের মতে, বয়স, পারিবারিক ইতিহাস এবং জীবনযাপনের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। এখানে দেখে নিন কোন সাতটি মেডিক্যাল টেস্ট প্রত্যেক পুরুষের করিয়ে নেওয়া ভালো।

 

১. ডায়াবেটিস : ওজন সঠিক মাত্রায় থাকলে এবং উচ্চমাত্রার কোলেস্টরেল ও উচ্চরক্তচাপ না থাকলে হয়তো আপনি ধারণাও করবেন না যে আপনার ডায়াবেটিস হতে পারে। কিন্তু ৪৫ পেরিয়েছেন এমন প্রতিটি পুরুষকে অবশ্যই খালি পেটে প্লাজমা গ্লুকোজ টেস্ট বা এ১সি টেস্ট করা জরুরি। চিকিৎসকের কাছে গিয়ে এই দুইটি রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। এসব তথ্য দিয়েছেন সিকাগোর লয়োলা ইউনিভার্সিটি হেলথ সিস্টেম এর ইন্টারনাল মেডিসিনের অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর ড. কেভিন পলস্লে।
৪৫ বছরের নিচে যে সব পুরুষের ওজন বেশি তাদের ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার উপদেশ দিয়েছেন ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস। আর যাদের পরিবারে বা বংশে ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের অবশ্যই পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।

 

২. যৌনবাহিত সংক্রমণ : আপনার যদি বহুগামিতার অভ্যাস থাকে তাহলে যৌনবাহিত সংক্রমণের পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। এ ধরনের বহু রোগ দেহে অবস্থান করে কিন্তু আমরা বুঝতে পারি না। এইচআইভি ভাইরাস নিয়ে ১০ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন কিন্তু বুঝতে পারেননি এমনও দেখা গেছে। ইউএস প্রিভেন্টিভ সার্ভিসেস টাস্ক ফোর্স ১৫ বছর থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে সব পুরুষকে এইচআইভি টেস্ট করতে বলে।
পাশাপাশি সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন পুরুষদের হেপাটাইটিস সি ভাইরাস পরীক্ষা করতে বলে। অনেকের সি ভাইরাস রয়েছে কিন্তু তার কোনো লক্ষণ বুঝতে পারেন না। অনিরাপদ সেক্স এবং রক্তগ্রহণের ফলে এই ভাইরাস দেহে আসতে পারে।

 

৩. বডি ম্যাস ইনডেক্স : এর জন্য বড় কোনো চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনার উচ্চতার সঙ্গে ওজনের সমন্বয় এই ইনডেক্স প্রকাশ করে। নিজে যদি জেনে থাকেন বা ডাক্তারের কাছে গিয়ে বডি ম্যাস ইনডেক্স জানার পর তার ফলাফল নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
মানুষের বিএমআই ১৮.৫ থেকে ২৪.৯ এর মধ্যে থাকলে তা স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। এই গাণিতিক হিসেবটি পুরোপুরি সঠিক নয়। তবুও মোটামুটি হিসেব নিয়ে আপনার সাবধান হওয়া জরুরি।

 

৪. কোলেস্টরেল : দ্য আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন জানায়, বিশের পর সব পুরুষকে প্রতি চার থেকে ছয় বছর পর পর দেহের কোলেস্টরেলের মাত্রা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। নারীদের চেয়ে পুরুষের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। হৃদরোগের জন্য এর সঙ্গে যোগ হতে পারে ডায়াবেটিস, তামাক গ্রহণ অথবা উচ্চরক্তচাপ।
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে কোলেস্টরেল নির্ণয় করা হয়। এর আগে ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে বলা হয়। এ পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার দেহের ভালো কোলেস্টরেল (এইচডিএল) এবং খারাপ কোলেস্টরেল (এলডিএল) মাপা হয়।

 

৫. রক্তচাপ : উচ্চ কোলেস্টরেলের মতো উচ্চরক্তচাপ অনেক সময়ই বোঝা যায় না। তবে চলজলদি এটি মাপা যায়। রক্তচাপ মাপার গতানুগতিক বা ডিজিটাল যন্ত্র দিয়ে রক্তচাপ মেপে ফেলুন। অন্যান্য সমস্যাতেও যতবার চিকিৎসকের কাছে যাবেন ততবার রক্তচাপ দেখে নেওয়া উচিত এবং তা ১৮ বছর পেরোনোর পর থেকেই তা করতে হয়।

 

৬. কোলনোস্কপি : ৫০ বছরে পা দিলেই প্রত্যেক পুরুষের কোলন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। যাদের পরিবারের অন্য কারো এ সমস্যা রয়েছে, তাদের আগে থেকেই পরীক্ষা করা উচিত।
এই পরীক্ষায় মলদ্বার দিয়ে একটি ছোট ক্যামেরা প্রবেশ করানো হয়। সেই ক্যামেরায় ধরা পড়ে পলিপাস বা ক্যান্সারের নিশানা। যতটা কঠিন মনে হচ্ছে আসলে মোটেও তেমন নয় পরীক্ষাটি। তাই ভয়ের কিছু নেই।
তবে এ পরীক্ষার প্রস্তুতি ব্যাপক ঝামেলার। আপনার বৃহদন্ত্র পুরোপুরি পরিষ্কার থাকতে হবে। ফলে টানা দুই-তিন দিন ধরে কোনো সলিড খাবার খাওয়া যাবে না। তা ছাড়া প্রচুর পরিমাণে তরল খেতে হবে। কোলনোস্কপি সঠিক হলে তাকে কোনো কষ্ট নেই। আরো ভালো খবর হলো, একবার পরীক্ষায় কিছু না পাওয়া গেলে আগামী ১০ বছর আর চিন্তার কিছু নেই।

 

৭. প্রোস্টেট পরীক্ষা : অন্যান্য ক্যান্সারের চেয়ে প্রোস্টেট ক্যান্সার পরীক্ষা করা নিয়ে তর্ক বিতর্ক রয়েছে। পোলস্লে বলেন, অনেকের মতে এ সংক্রান্ত পরীক্ষাগুলো ব্যয়বহুল এবং তা ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি করে। তবে বয়স ৫০ পেরিয়ে গেলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। এটি দেখতে পিএসএ টেস্ট করা হয় যার মাধ্যমে রক্তের প্রোস্টেট-স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন নামের এক ধরনের প্রোটিন মাপা হয়।

লেখক পরিচিতি
এম, এইচ, মিনহাজ
আমি বিভিন্ন বাংলা/ইংরেজী ব্লগের একজন অনিয়মিত এবং সখের ব্লগার। তবে নিয়মিত লেখার ইচ্ছে থাকলেও অনিয়মিত ভাবেই পাঠকদের বিরক্ত করে থাকি। আমার লেখার বিষয়বস্তু- যা মনে আসে তাই। কারও কাছ থেকে বাহবা পাওয়ার জন্য লিখি না। কেউ আমার লেখা পছন্দ করলে খুশি হই তবে অপছন্দ করলেও লেখালেখি বন্ধ করার কোন অবকাশ নেই, কারন আমি একান্ত সখের বশেই লেখালেখি করি।
আমার ব্লগ সমুহ:

আপনার মতামত দিন