cloudক্লাউড সেবা থেকে তারকাদের ছবি ফাঁসের ঘটনায় তোলপাড় ওয়েব দুনিয়া। অনেকেই ‘ক্লাউড’ এর কথা শুনেছেন। কিন্তু কী এই ক্লাউড? সম্প্রতি অ্যাপলের ক্লাউড সার্ভিস থেকে তারকাদের নগ্ন ছবি ফাঁস হয়। এই ক্লাউড নিয়ে সিএনএন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ক্লাউডকে খুব সাধারণভাবে কম্পিউটারের পরিবর্তে ইন্টারনেটে চালিত সফটওয়্যার ও সার্ভিস বলা যেতে পারে। অ্যাপলের আইক্লাউড, ড্রপবক্স, নেটফ্লিক্স, আমাজন ক্লাউড ড্রাইভ, ফ্লিকার, গুগল ড্রাইভ, মাইক্রোসফটঅফিস৩৬৫, ইয়াহুমেইল সবগুলোই ক্লাউড সেবা।

ক্লাউড ব্যবহারের সুবিধা অনেক। কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই প্রয়োজনীয় তথ্য নিরাপদে সংরক্ষণের জন্য অনেকেই ব্যাক আপ রাখার পরিকল্পনা করেন। এক্ষেত্রে ক্লাউডে নিরাপদে তথ্য সংরক্ষণ করতে পারেন। ক্লাউড হচ্ছে কম্পিউটিংয়ের বিশেষ সার্ভিস যা বিশেষ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কম্পিউটার থেকে কম্পিউটার বা অন্যান্য যন্ত্রে কম্পিউটিং সার্ভিস হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ক্লাউডে তথ্য রাখলে তথ্য চুরি, হার্ড ড্রাইভ অচল হয়ে যাওয়া বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পায়। এ ছাড়াও যে কোনো স্থানে বা ইন্টারনেট সুবিধাসম্পন্ন যন্ত্র থেকে তা ব্যবহার করা যায়।

ক্লাউড সুবিধা থাকায় যে নাটক টেলিভিশনে মাঝপথে দেখা শেষ করেছিলেন তা পরে চলতি ট্রেনেও বাকি অংশ টুকু দেখে নিতে পারেন। বাড়িতে আইপ্যাডে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলতে খেলতে অফিসের সময় হয়ে গেলে পরবর্তী লেভেল অফিসে গিয়ে কম্পিউটারে খেলতে পারেন। এ রকম অনেক সুবিধা ক্লাউড থেকে নিতে পারেন। মোবাইল অ্যাপস ও পিসি সফটওয়্যার এখন ক্লাউডের অংশ হয়ে যাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, স্মার্টফোন ছবি তুললে আইক্লাউড কিংবা গুগল প্লাসের ফটো স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা ব্যাকআপ রাখে। ক্লাউডে ব্যবহারকারীর নিজের সৃষ্টি করা তথ্যের বাইরেও অনেক ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষিত থাকে।

ক্লাউড কী নিরাপদ?

ক্লাউডের জগতে নিজেকে আড়াল করা খুবই কঠিন। কারণ ক্লাউডভিত্তিক সফটওয়্যারে আপনাকে লগইন করতেই হয়। ক্লাউডে তথ্য রাখার বিষয়টি নিরাপদ কিনা সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য হচ্ছে, আপনি যে প্রতিষ্ঠানের সেবা নিচ্ছেন সেই প্রতিষ্ঠানটি কতটা সুরক্ষা দেয় তা দেখতে হবে। এক্ষেত্রে সুরক্ষার বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের ওপর আপনার আস্থা আর আপনার দেওয়া পাসওয়ার্ডের ওপর নির্ভর করে। অধিকাংশ ক্লাউড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা রেকর্ড ভালো। তবে সম্প্রতি এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। আইক্লাউডের নিরাপত্তা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে অ্যাপল। অ্যাপলের আইক্লাউড থেকে হলিউডের অনেক তারকার গোপনীয় ছবি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অ্যাপল অবশ্য আইক্লাউডের নিরাপত্তা ভাঙার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

ক্লাউডে জমা রাখা তথ্য থাকে কোথায়?

হার্ডডিস্ক বা ফোন মেমোরির পরিবর্তে ক্লাউডে রাখা তথ্য বিশ্বের বড় বড় ডাটা সেন্টারে সংরক্ষিত থাকে। গ্রাহক ক্লাউড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাজন, গুগল, অ্যাপল. মাইক্রোসফট ও ফেসবুক সবচেয়ে বড় ডাটা সেন্টারের মালিক। এখন পর্যন্ত ৩২ কোটি আইক্লাউড ব্যবহারকারী রয়েছে।  এখন পর্যন্ত ফেসবুকে ৪০০ বিলিয়ন ছবি আপলোড হয়েছে এবং প্রতিদিন ৩৫ কোটি ছবি যুক্ত হচ্ছে। ১৯০ টি দেশে ক্লাউড সেবা দেয় আমাজন।  এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্ভার ফার্ম এত বিশাল ও এতে এত শক্তি প্রয়োজন হয় যাতে যুক্তরাষ্ট্রের দুই শতাংশ বিদ্যুত্ ব্যয় হয় এই ডাটা সেন্টারে। যদি ক্লাউড কম্পিউটিং শিল্প একটি দেশ হিসেবে ধরা হয় তবে শক্তি ব্যবহারের দিক থেকে এটি হত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ।

ক্লাউডে বিনামূল্যে তথ্য রাখা যায়

ক্লাউডে নিরাপদে বিনামূল্যেই তথ্য সংরক্ষণ করার সুবিধা দেয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বিনামূল্যেই অনলাইন স্টোরেজ সুবিধা দেয় এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সারডক, মেগা, এড্রাইভ, ওয়ানড্রাইভ, ড্রপবক্স।

সারডক-১০০জিবি (http:www.surdoc.com)

সারডকে সাইন আপ করার মাধ্যমে বিনামূল্যেই ১০০ জিবি জায়গা পাওয়া যায়। এর জন্য আলাদা করে কোনো অ্যাপ বা অন্য কোনো কিছু ডাউনলোড করারও দরকার পড়ে না। ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহার করেই এই সুবিধা নেওয়া যায়। ১০০ জিবি ডেটা স্টোরেজকে চাইলে আরও বাড়িয়ে এক টেরাবাইট পর্যন্ত করা যায়। এই সাইটটির প্রচারণা চালিয়ে বা বন্ধুকে এই সাইট ব্যবহারের জন্য উদ্বুদ্ধ করলে বিনামূল্যে ডেটা স্টোরেজ বাড়িয়ে নেওয়া যায়।

মেগা-৫০ জিবি ( mega.co.nz)

বিখ্যাত মেগাআপলোড ওয়েবসাইটের নির্মাতা কিম ডটকমের উদ্যোগ ‘মেগা’। নিরাপদে তথ্য সংরক্ষণ করতে মেগা ব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যান্ড্রয়েড, ব্ল্যাকবেরি, আইওএস প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি ব্রাউজার থেকেও এই মেগা ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে ৫০ জিবি তথ্য বিনামূল্যে সংরক্ষণ করা যায়।

এড্রাইভ-৫০ জিবি (http:www.adrive.com)এড্রাইভে ৫০ জিবি পর্যন্ত তথ্য বিনামূল্যে সংরক্ষণ করার সুবিধা রয়েছে। অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস অ্যাপসের পাশাপাশি ওয়েব ব্রাউজার থেকেও এড্রাইভে তথ্য সংরক্ষণ করা যায়

ওয়ানড্রাইভ-১৫জিবি (http:onedrive.live.com)

মাইক্রোসফটের ওয়ানড্রাইভ ক্লাউড স্টোরেজ আগে স্কাইড্রাইভ নামে পরিচিত ছিল। উইন্ডোজ ৮, এক্সবক্স ৩৬০তে বিল্ট ইন রয়েছে। যদি পুরোনো সংস্করণের উইন্ডোজ বা ম্যাক কম্পিউটার ব্যবহার করেন তবে ওয়ানড্রাইভ ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এটি উইন্ডোজ ফোন, অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস প্ল্যাটফর্মেও ব্যবহার উপযোগী। বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ১৫ জিবির ওপরেও জায়গা বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে ওয়ানড্রাইভে।

ড্রপবক্স-২জিবি (http:www.dropbox.com)

ড্রপবক্সের ক্ষেত্রে বিনামূল্যে তথ্য সংরক্ষণের জন্য মাত্র দুই গিগাবাইট জায়গা পাওয়া যায়। তবে তথ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে ড্রপবক্সের নানা সুবিধা থাকায় এটি জনপ্রিয় একটি সেবায় পরিণত হয়েছে। ডেস্কটপের পাশাপাশি অ্যান্ড্রয়েড, ব্ল্যাকবেরি, আইওএস থেকেও তথ্য সিনক্রোনাইজেশনের সুবিধা পাওয়া যায়।


আপনার মতামত দিন