Central shahid minar 1

কতিপয় ব্যাক্তির উর্বর মস্তিষ্ক হতে প্রসবিত ১৪ই ফেব্রুয়ারী’র ১ দিনের “ভালবাসা’র জন্য কেঁদো না। এই ভালবাসা দিবসের কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। এই দিনে ভালবাসার জন্য কেউ জীবন দিয়েছিল এমন সর্বজন স্বীকৃত ঐতিহাসিক কোন ঘটনার প্রমান ও পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি কল্পকাহিনী প্রচলিত আছে বটে।

কোথাকার কোন ব্যাক্তি কখানো হয়ত কোন রাষ্ট্রের তখনকার অত্যাবশকীয় নিয়ম ভেঙে বিয়ে করার অপরাধে জীবন দিতে হয়েছিল। এমনটা হয়ে থাকলে তা ছিল দুঃখ জনক। তাতে আমাদের কি লাভ হয়েছে। আমরা কি তখন থেকেই ভালবাসার আর বিয়ের অধিকার পেয়েছি নাকি? তার আগে কি সবাই চির কুমার আর চিরকুমারী ছিল??

অধিকার আদায়ের জন্য জীবন দেয়ার ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। সবগুলিই দুঃখজনক। তবে কোন বিসর্জন আমাদের অর্জনে কত বেশি কাজে লেগেছে সেটাকেই আমরা বেশি স্বরন করি।

অথচ গত দুই-তিন দশক ধরে পালন করে আসা ভ্যালেন্টাইন ডে নামক দিবসটি সারা বিশ্বের লাখো কোটি মানুষের জন্য মিথ্যা প্রলোভন ও ধোঁকায় পরে চরিত্র বিসর্জনের নীরব কান্নার দিবসে পরিনত হয়েছে। এই দিবসে কেউ মিথ্যা আশ্বাসে প্রিয় জনের অভিনয় করে অন্যকে সারা জীবনের জন্য কলঙ্কিত করে আর পরচরিত্র হননের খেলায় বিজয়ী হয়ে মীরজাফরের মত লালসার ভোগ-সুখের আনন্দে ভাসে। অনেকের আজীবন কান্নাই শুরু হয় এই প্রতারনা দিবসের ফাঁদে পরে করা মহাভূলের মধ্যদিয়ে।

valentines dayএটা সেই দিবস যে দিন কেউ প্রতারনা খেলার ছক আঁকে কেউ আবার সেই ছকের গুটি হয় ইচ্ছায়, অনিচ্ছায় এবং ধোঁকায়। কেউ ছকে প্রতারিত হয়ে নিজেকে উজার করে দিয়ে ছক থেকে অবাঞ্চিত হয় এবং নতুন কেউ প্রতারিত হয়ে ছকে প্রবেশ করে আরো প্রতারিত হওয়ার জন্য। কেউ ছকের বাইরে বসে দর্শক হয়ে তামাশা দেখে এবং প্রতারনার ছকের গুটি হওয়ার স্বপ্ন দেখে, সর্বাত্বক চেষ্ঠা করে।

এ দিন কেউ প্রতারিত হয়ে কাঁদে, কেউ প্রতারিত হওয়ার প্রত্যাশায় কাঁদে আবার কেউ প্রিয়জনকে প্রতারনার করার চেষ্টায় কাঁদে।

এসকল ভিত্তিহীন ভালবাসা দিবস নামক ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে নোংড়ামীর প্রত্যাশায় কান্না বন্ধ কর। ভালবাসার কোন বিশেষ দিন লাগে না। সব দিনই প্রিয়জনকে ভালবাসা যায়।

কাঁদ তাদের জন্য, যারা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারীতে রাজ পথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে, নিজের জীবনের বিনিময়ে তোমার ভালবাসার প্রিয় মানুষটিকে তোমার নিজের ভাষায় সকল সময় ভালবাসার কথা বলার জন্য ”ভালবাসা”র লাখো উক্তি তোমার জন্য উৎসর্গ করে গেছেন।

অন্যথায় সকল আপনজন ও ভালবাসার প্রিয় জনকে অনুভূতিহীন যন্ত্রের মত আজকে আমাদের বলতে হত “মুজে তুমছে মহব্বত হায়” অথবা “মেয় তাতনু পেয়ার কারতা”।

তবে দুঃখের বিষয় ১৯৫২ সালে শহীদদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের প্রানের “বাংলা” ভাষার প্রতি ভালবাসা আজ ঘরের দেয়ালের এককোনে ২১ ফেব্রুয়ারীর মলিন ফ্রেমে বাঁধা। যা বছরে এক দিনই শুধু ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মেকি প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হই। আর বছরের বাকিঁ ৩৬৪ দিনই বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতির অশুভ জোয়ারে নির্লজ্জ ভাবে গা বাসিয়ে ডুবে থাকি এবং যে ভাবে পারি বাংলা ভাষা বিকৃতি ও বিসর্জনের অপচেষ্ঠায় লিপ্ত থাকি।

এ ক্ষেত্রে দেশের মিডিয়া গুলি আরও এক ধাপ এগিয়ে আছে।

shahid minar 3
বিদেশি ভাষা চর্চা জ্ঞান চর্চারই অংশ কিন্তু তথা কথিত আধুনিকতা ও ভাষা চর্চার নামে নিজের সর্বস্ব ভাষা ও কৃষ্টি প্রতি দিন বিদেশিদের কাছে নির্লজ্জ ভাবে বিসর্জন দিয়ে চরিত্রহীন জাতিতে পরিনত হওয়ার দিকে এগোচ্ছি আমরা। 

আরো মজার বিষয় শত সহস্র বছরের বাংলা ভাষাকে আমরা বটি দিয়ে কেটে দুই ভাগে ভাগ করে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আটকে ফেলেছি। এক ভাগের নাম ভারতীয় বাংলা এবং আরেকটি আমাদের বাংলাদেশী বাংলা।
ভারতীয় বাংলার রুপ দেখতে এখনি ঘুরে আসতে পারেন পশ্চিম বঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকায় (http://www.anandabazar.com) বা চব্বিশ ঘন্টা ডট কমে (http://zeenews.india.com/bengali)। 

আর বাংলাদেশি বাংলাকে দেশের লেখক, কবি সাহিত্যিক, ভাষা প্রেমিক ও কিছু সুশীল ব্যাক্তি সঠিক পথে রাখার আপ্রান চেষ্ঠা করে চলছেন। আর আমরা ১৬ কোটি মানুষ ভাষাটাকে ১৬ কোটি ফুটবল বানিয়ে এর পা থেকে ওর পায়ে, এই পা থেকে ওই পায়ের ঘ্রান নিয়ে আনন্দে আত্নহারা হওয়ার চেষ্ঠা করছি। আর পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন, সংযোজন এবং কাচ-ছাঁট করে বানাতে চাচ্ছি একটি আধুনিক বাংলা ভাষা যার নাম হবে “বিদেশি বাংলা ভাষা”। 

তবে এটা সত্য যে বাংলাদেশী বাঙালী, ভারতীয় বাঙালী এবং আধুনিক বিদেশী বাঙালী সবাই রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শমসুর রহমান, জহির রায়হান সহ সকল কালজয়ী বাঙালী সাহিত্যিকদেরকে নিয়ে সবসময় গর্ব করি।


কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে তারা কোন ধরনের বাংলা সাহিত্য লিখেছেন? বাংলাদেশি, ভারতীয় নাকি বিদেশি বাংলা সাহিত্য?


সব কাটা কাটি, ভাগা ভাগি ফেলে এবার আসুন একটু বাঙালি হই। ২১শে ফেব্রুয়ারীর জন্য নয় সকল সময়ের জন্য সকল স্থানের জন্য আমরা বাঙালী হব। মাথা উচুঁ করে আমরা এক সুরে বলি আমরা বাঙালী।

বিশ্বের কাছে এটাই আমাদের বড় পরিচয়।

shahid minar4

আমাদের ভাষা শহীদগন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করার জন্য তাদের জীবন বিসর্জন দেন নাই। তারা তাদের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন মায়ের ভাষাকে আগ্রাসী জানোয়াদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য।

ইউনেস্কো মাতৃভাষার জন্য সেই শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্বের সকল মানুষের মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২১শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

সারা বিশ্ব আমাদের ভাষা শহীদগনকে সম্মান দিয়ে নিয়ে গেছে এক অসীম উচ্চতায় আমরা বিদেশী সুতোয় তাদেরকে নীচ দিকে টেনে নামাতে চাচ্ছি।

আমরা বাঙালী, হাজার বছরের গর্বিত সংষ্কৃতির ধারক ও বাহক। মানবতার কল্যানের জন্য জীবন উৎসর্গে ইতিহাসে বাঙালীর জুড়িনেই। তাই এসব ধার-কর্জ করা দিবস আমাদের প্রয়োজন নেই।  শিকড়কে অস্বীকার করে ভূলে গেলে চলবে না যে সংষ্কৃতি আমাদেরকে অশ্লীলতা শিক্ষাদেয় তা আমাদের নয়।

লেখক পরিচিতি
এম, এইচ, মিনহাজ
আমি বিভিন্ন বাংলা/ইংরেজী ব্লগের একজন অনিয়মিত এবং সখের ব্লগার। তবে নিয়মিত লেখার ইচ্ছে থাকলেও অনিয়মিত ভাবেই পাঠকদের বিরক্ত করে থাকি। আমার লেখার বিষয়বস্তু- যা মনে আসে তাই। কারও কাছ থেকে বাহবা পাওয়ার জন্য লিখি না। কেউ আমার লেখা পছন্দ করলে খুশি হই তবে অপছন্দ করলেও লেখালেখি বন্ধ করার কোন অবকাশ নেই, কারন আমি একান্ত সখের বশেই লেখালেখি করি।
আমার ব্লগ সমুহ:

আপনার মতামত দিন