ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রতিটা রন্ধে রন্ধে ঈমানদারদেরকে ধৈর্য্যের শিক্ষা দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেছেন ধৈর্য্যশীলদের সাথে আল্লাহ আছেন, ধৈর্য্যশীলদের সাথে আল্লাহ থাকেন। বর্তমান বিশ্বের মুসলমানরা ধৈর্য্যের এই নিয়ামকের কথা জানলেও ধৈর্য্যের অভাব তাদের মধ্যেই বেশি। সম্প্রতি সমকালীন জ্ঞানীগুনিদের ভিতরেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধৈর্য্যের অনেক অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইবাদত, পাপ এবং বিপদাপদের ক্ষেত্রে উম্মত আজ একেবারে অধৈর্য্য। ইবাদত করতে গিয়ে উম্মত আজ ধৈর্য্যহারা, পাপের কাজ হতে বিরত থাকার ধৈর্য্যতো নেই বললেই চলে, রাস্তা দিয়ে একটি নারী যাচ্ছে তার প্রতি দৃষ্টি দেয়া হতে বিরত থাকার ধৈর্য্য, সুদ, ঘুষ, নগ্নতা, বেহায়াপনা, লোভ, হিংসা, গীবত, অপবাদ ইত্যাদী পাপ হতে বিরত থাকার ধৈর্য্য ধরতে পারছিনা। রোগবালা বিপদ আপদ মুসিবতে ধৈর্য্য ধরতে পারছিনা। আজকে আমরা হযরত আইয়ুব আঃ এর ধৈর্য্য হতে আমাদের জীবনে কিছু শিক্ষা নিবো। আল্লাহ তাআ'লা হযরত আইয়ুবের (আঃ) কষ্ট ও বিপদাপদের বর্ণনা দিচ্ছেন। তার আর্থিক, দৈহিক এবং সন্তান সন্ততি সহ বহু প্রকারের জীবজন্তু, ক্ষেত খামার বাগ-বাগিচা ইত্যাদির অভাব ছিলনা। তার আল্লাহ প্রদত্ত সন্তান সন্ততি সমূহ দাস-দাসী, ধন সম্পদ ইত্যাদি সবকিছুই বিদ্যমান ছিল। তার উপর আল্লাহ তাআলার পরীক্ষা আসে এবং সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যায়। এমনকি তাঁর দেহেও কুষ্ঠরোগ প্রকাশ পায়। শুধুমাত্র অন্তর ও যবান ছাড়া তার দেহের কোন অংশই এই রোগ হতে রক্ষা পায় নাই। শেষ পর্যন্ত আশে পাশের লোকদের কাছে তিনি ঘৃণার পাত্র হয়ে যান। বাধ্য হয়ে তাঁকে শহরের এক জনমানবহীন প্রান্তে অবস্থান করতে হয়। তার একটি মাত্র স্ত্রী ছাড়া সবাই তাকে ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই বিপদের সময় তার থেকে সবাই সরে পড়ে। এই একটি মাত্র স্ত্রী সদা তাঁর সেবার কাজে লেগে থাকতেন। সাথে সাথে মজুরী খেটে খেটে তার পানাহারেরও ব্যবস্থা করতেন। নবী (সাঃ) বলেছেনঃ “ সবচয়ে কঠিন পরীক্ষা হয় নবীদের উপর। তারপর সৎলোকদের উপর এরপর তাদের চেয়ে কম মর্যাদা সম্পন্ন লোকদের উপর এবং এরপরে আরো নিম্নমানের লোকদের উপর আল্লাহর পরীক্ষা এসে থাকে। অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, প্রত্যেকের পরীক্ষা তার দ্বীনের পরিমাণ হিসেবে হয়ে থাকে। যদি কেউ দ্বীনের ব্যাপারে দৃঢ় হয় তবে তার পরীক্ষাও কঠিন হয়। হযরত আইয়ুব (আঃ) বড়ই ধৈর্যশীল ছিলেন এমনকি তার ধৈর্যশীলতার কথা সর্বসাধারণের মুখে মুখে রয়েছে। যখন হযরত আইয়ুবের (আঃ) পরীক্ষা শুরু হয় তখন তাঁর সন্তান সন্ততি মারা যায়, ধন- সম্পদ ধ্বংস হয় এবং তিনি সম্পূর্ণরূপে রিক্ত হস্ত হয়ে পড়েন। এতে তিনি আরো বেশী আল্লাহর যিকরে লিপ্ত থাকেন। তিনি বলতে থাকেনঃ “হে সকল পলিনকারীদের পালনকর্তা! আমাকে আপনি বহু ধন মাল ও সন্তান সন্ততি দান করেছিলেন। ঐ সময় আমি ঐগুলিতে সদা লিপ্ত থাকতাম। অতঃপর আপনি ঐগুলি আমার থেকে নিয়ে নেয়ার ফলে আমার অন্তর ঐ সবের চিন্তা থেকে মুক্ত হয়েছে। এখন আমার অন্তরের মধ্যে ও আপনার মধ্যে কোনই প্রতিবন্ধকতা নেই। যদি আমার শত্রু ইবলীস আমার প্রতি আপনার এই মেহেরবানীর কথা জানতে পারতো তবে সে আমার প্রতি হিংসায় ফেটে পড়তো। ” ইবলীস তার এই কথায় এবং তাঁর ঐ সময়ের ঐ প্রশংসায় জ্বলে পুড়ে মরে। তিনি নিম্নরূপ প্রার্থনাও করেনঃ “হে আমর প্রতিপালক! আপনি আমাকে ধন সম্পদ, সন্তান সন্ততি এবং পরিবার পরিজনের অধিকারী করেছিলেন। আপনি খুব ভাল জানেন যে, ঐ সময় আমি কখনো অহংকার করি নাই এবং কারো প্রতি জুলুম ও অবিচারও করি নাই। হে আল্লাহ! এটা আপনার অজানা নেই যে, আমার জন্যে নরম বিছানা প্রস্তুত থাকতো কিন্তু আমি তা পরিত্যাগ করে আপনার ইবাদতে রাত্রি কাটিয়ে দিতাম এবং আমার নসকে ধমকের সুরে বলতামঃ তুমি নরম বিছানাতে আরাম করার জন্যে সৃষ্ট হও নাই। হে আমার পালনকর্তা! আপনার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমি সুখ শান্তি ও আরাম আয়েশ বিসর্জন দিতাম। তাঁর কাছে শুধু তার একজন স্ত্রী ছিলেন। দীর্ঘযুগ এভাবে অতিবাহিত হওয়ার পর একদা তিনি তাঁর স্বামীকে বলেনঃ “হে আল্লাহর নবী (আঃ)! আপনি মহান আল্লাহর নিকট কেন প্রার্থনা করেন না যাতে তিনি আমাদেরকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করেন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “দেখো, আল্লাহ তাআলা আমাকে সত্তর বছর সুস্থ শরীরে রেখেছিলেন। সুতরাং তিনি যদি আমাকে সত্তর বছর এই অবস্থায় রাখেন এবং আমি ধৈর্য ধারণ করি আল্লাহর জন্যে তবে এটা তো আল্লাহর জন্যে খুবই অল্প (সময়)। " একথা শুনে তাঁর স্ত্রী কেঁপে ওঠেন। তিনি তাঁর স্বামীর জন্যে শহরে বেরিয়ে যেতেন এবং এর ওর বাড়ীতে কাজকাম করে যা পেতেন তাই এনে স্বামীকে খাওয়াতেন। ফিলিস্তিনবাসী দু’জন লোক হযরত আইয়ুবের (আঃ) ভাই ও অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল। তাদের কাছে শয়তান গিয়ে বলেঃ “তোমাদের ভাই আইয়ূব (আঃ) ভীষণ বিপদ গ্রস্ত ও কঠিন পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। তোমরা গিয়ে তার খবরা খবর নাও এবং তোমাদের এখান থেকে কিছু মদ সঙ্গে নিয়ে যাও। ওটা তাঁকে পান করালেই তিনি আরোগ্য লাভ করবেন। তার কথা মত তারা দু'জন হযরত আইয়ুবের (আঃ) নিকট আগমন করে এবং তার অবস্থা দেখা মাত্রই তাদের চক্ষু অশ্রু সিক্ত হয়ে ওঠে। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমরা কে?” তারা নিজেদের পরিচয় দান করে। তিনি খুবই খুশী হন এবং তাদেরকে মুবারকবাদ জানান। তারা বলেঃ “হে আইয়ূব (আঃ)! সম্বতঃ আপনি ভিতরে কিছু গোপন রাখতেন এবং বাইরেও বিপরীত প্রকাশ করতেন। এজন্যেই আল্লাহ আপনাকে পরীক্ষায় ফেলেছেন। ”তাদের কথা শুনে হযরত আইয়ূব (আঃ) দৃষ্টি আকাশের দিকে উঠিয়ে বলেনঃ “আমি কি গোপন রাখতাম ওর বিপরীত কি প্রকাশ করতাম তা তিনি (আল্লাহ) জানেন। তিনি বরং আমাকে এই বিপদে জড়িয়ে ফেলেছেন এই উদ্দেশ্যে যে, আমি ধৈর্য ধারণ করি কি অধৈর্য হয়ে পড়ি তা তিনি দেখতে চান। অতঃপর তারা দু'জন বলেঃ “আমরা আপনার জন্যে ওষুধ এনেছি, আপনি তা পান করে নিন। এতে আপনি আরোগ্য লাভ করবেন। ওটা হলো মদ, যা আমরা আমাদের ওখান থেকে আনয়ন করেছি। ” তাদের একথা শোনা মাত্রই তিনি কঠিন রাগান্বিত হন এবং বলেনঃ “কলুষিত শয়তান তোমাদেরকে আমার নিকট আনয়ন করেছে। তোমাদের সাথে কথা বলা এবং তোমাদের খাদ্য ও পানীয় আমার জন্যে হারাম। " তখন তারা দু'জন তার নিকট থেকে চলে যায়। একদিনের ঘটনা, তাঁর স্ত্রী এক বাড়ীতে রুটি পাকিয়ে দিচ্ছিলেন। তাদের একটি শিশু ঘুমিয়ে পড়েছিল। তখন বাড়ীর মালিক ঐ শিশুর অংশের ছোট রুটি তাকে দিয়ে দেয়। তিনি রুটিটি নিয়ে হযরত আইয়ুবের (আঃ) নিকট আসেন। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “এরুটি তুমি কোথা হতে আনলেঃ উত্তরে তিনি ঘটনাটি বর্ণনা করেন। এ ঘটনা শুনে তিনি তার স্ত্রীকে বলেনঃ “তুমি এখনই রুটি নিয়ে ফিরে যাও। খুব সম্ভব শিশুটি এখন জেগে উঠেছে এবং এই ছোট রুটিটির জন্যে জিদ ধরেছে এবং কেঁদে কেঁদে সারা বাড়ীকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে। বাধ্য হয়ে তার স্ত্রী রুটি ফিরিয়ে নিয়ে চললেন। ঐ বাড়ীর বারান্দায় একটি ছাগল বাধা ছিল। ছাগলটি তাকে জোরে এক টক্কর মারে। ফলে তাঁর মুখ দিয়ে হঠাৎ বেরিয়ে যায়ঃ “দেখো, হযরত আইয়র (আঃ) কত বড় ভুল ধারণা করে বসেছেন?" অতঃপর তিনি উপরে উঠে গিয়ে দেখেন যে, সত্যি সত্যিই শিশুটি রুটির জন্য কান্না জুড়ে দিয়েছে এবং বাড়ীর লোকদেরকে ব্যতিব্যস্ত করে ফেলেছে। এদেখে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলঃ “আল্লাহ তাআলা হযরত আইয়ুবের (আঃ) উপর দয়া করুন!” অতঃপর তিনি রুটিটি তাদেরকে দিয়ে দেন এবং ফিরে আসেন। পথে শয়তান ডাক্তারের রূপ ধরে তার সাথে সাক্ষাৎ করে এবং বলেঃ “তোমার স্বামী অত্যন্ত কষ্ট পাচ্ছেন। দীর্ঘ দিন ধরে কঠিন রোগে ভুগছেন। তুমি তাকে বুঝিয়ে বল যে, তিনি যেন অমুক গোত্রের প্রতিমার নামে একটি মাছি মারেন। এটা করলেই তিনি আরোগ্য লাভ করবেন। " হযরত আইয়ুবের (আঃ) নিকট পৌঁছে তিনি তাঁকে এই কথা বলেন। তিনি তখন তাকে বলেনঃ “তোমার উপর কলুষিত শয়তানের যাদু লেগে গেছে। সুস্থ হলে আমি তোমাকে একশ চাবুক মারবো। ” একদা তাঁর স্ত্রী অভ্যাসমত জীবিকার অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। বাড়ী বাড়ী যান কিন্তু কাজ কাম পেলেন না। কাজেই তিনি নিরাশ হয়ে পড়েন। সন্ধ্যায় ঘনিয়ে আসলে হযরত আইয়ুবের (আঃ) ক্ষুধার চিন্তায় তিনি ব্যাকুল হয়ে পড়েন। সুতরাং তিনি নিরুপায় হয়ে তার চুলের এক খোপা কেটে নিয়ে এক সম্ভ্রান্ত লোকের কন্যার নিকট বিক্রী করেন। মেয়েটি পানাহারের অনেক কিছু জিনিস তাকে প্রদান করে। তা নিয়ে তিনি হযরত আইয়ুবের (আঃ) নিকট পৌঁছেন। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তুমি এতগুলো ভাল ভাল খাদ্য পেলে কোথায়?" তাঁর স্ত্রী উত্তরে বলেঃ “এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির বাড়ীতে কাজ করে দিয়ে ওর বিনিময়ে এগুলো পেয়েছি। " হযরত আইয়ুব (আঃ) তখন তা খেয়ে নেন। ঘটনাক্রমে দ্বিতীয় দিনও এরূপই ঘটে। সেদিনও তিনি তাঁর চুলের অপর খোপাটি কেটে নিয়ে বিক্রী করে দেন এবং ওর বিনিময়ে প্রাপ্ত খাদ্য নিয়ে স্বামীর নিকট হাযির হন। আজকেও ঐ খাদ্যই দেখে হযরত আইয়ূব (আঃ) তার স্ত্রীকে বলেনঃ “আল্লার কসম! আজকে আমি কিছুতেই এ খাদ্য খাবো না যে পর্যন্ত না তুমি আমাকে খবর দেবে যে, তুমি এ খাদ্য কিরূপে পেলে?" তখন তিনি তাঁর মাথা হতে ওড়না সরিয়ে দেন। ফলে হযরত আইয়ুব (আঃ) দেখতে পান যে, তাঁর মাথার চুল সবই কর্তিত হয়েছে। এ দেখে তিনি অত্যন্ত হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। ঐ সময় তিনি মহামহিমান্বিত আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেনঃ অর্থাৎ “হে আমার প্রতিপালক! আমি দুঃখ কষ্টে পড়েছি, আপনি তো দয়ালুদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু!" যে শয়তান হযরত আইয়ুবের (আঃ) পিছনে লেগেছিল তার নাম ছিল মাবসূত। হযরত আইয়ুবকে (আঃ) তার স্ত্রী প্রায়ই বলতেনঃ “আপনি রোগ মুক্তির জন্যে আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করুন। ” কিন্তু তিনি প্রার্থনা করতেন না। একদা বানী ইসরাঈলের কতকগুলি লোক তার পার্শ্ব দিয়ে গমন করে। তাকে দেখে তারা মন্তব্য করেঃ “এ লোকটি অবশ্যই কোন পাপের কারণে এই কষ্টে পতিত হয়েছেন। ঐ সময় হঠাৎ তার মুখ দিয়ে এই প্রার্থনা বেরিয়ে “হে আল্লাহ! যদি আপনার জানা থাকে যে, এমন কোন রাত্রি অতিবাহিত হয় নাই যে রাত্রিতে আমার জানা মতে কেউ ক্ষুর্ধাত অবস্থায় থেকেছে এবং আমি পেট পুরে খাদ্য খেয়েছি। হে আল্লাহ! যদি আমি আমার একথায় আপনার নিকট সত্যবাদী হই তবে আপনি আমাকে সত্যায়িত করুন। তৎক্ষণাৎ আকাশ হতে তাকে সত্যায়িত করা হয় এবং ঐ দুজন তা শুনতে পায়। আবার তিনি বলেন, “হে আল্লাহ! কখনও এমন ঘটে নাই যে, আমার কাছে অতিরিক্ত কাপড় থেকেছে এবং কোন উলঙ্গ ব্যক্তিকে আমি তা প্রদান করি নাই। যদি আমি এতে সত্যবাদী হই তবে আপনি আমাকে আকাশ হতে সত্যায়িত করুন। এবারেও তাদেরকে শুনিয়েই তাঁকে সত্যায়িত করা হয়। পুনরায় তিনি নিম্নরূপ প্রার্থনা করতে করতে সিজদায় পড়ে যানঃ “হে আল্লাহ! আমি ঐ পর্যন্ত সিজদা হতে মাথা উঠাবো না যে পর্যন্ত না আপনি আমার উপর আপতিত সমস্ত বিপদ দূর করবেন। " তার এই প্রার্থনা কবুল হয়ে যায় এবং তিনি সিজদা হতে মাথা উঠানোর পূর্বেই তার সমস্ত বিপদ ও রোগ দূর হয়ে যায়। তখনই আল্লাহ তাআলা জান্নাত হতে তাঁর জন্যে হুল্লা পোষাক বিশেষ পাঠিয়ে দেন। ওটা পরিধান করে তিনি এক প্রান্তে একাকী বসে পড়েন। যখন তার স্ত্রী আগমন করেন তখন তিনি তাকে চিনতে না পেরে তাকেই জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর বান্দা! এখানে একজন রুগ্ন, দুর্বল ও শক্তিহীন ব্যক্তি ছিলেন। তার কি হলো তা আপনি বলতে পারেন কি? তাঁকে বাঘে খেয়ে ফেলে নাইতো? অথবা কুকুরে নিয়ে যায় নাই তো?" উত্তরে তিনি বলেনঃ “না, না। ঐ রুগ্ন ব্যক্তি আইয়ুব (আঃ) আমিই তো। " আপনি আমার সাথে রসিকতা করছেন কেন?” তিনি বলেনঃ “না, না। আমিই আইয়ূব (আঃ)। আল্লাহ আমাকে আরোগ্য দান করেছেন। তিনি আমাকে আমার প্রকৃত রূপ ও ঔজ্জ্বল্যও ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর মাল ধনও তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তাঁর সন্তানদেরকে এবং তাদের সাথে অপরাপর সম্পদগুলিও তিনি ফিরিয়ে পান। ওয়াহীর মাধ্যমে তাকে এ সুসংবাদও দেয়া হয়েছিল ও বলা হয়েছিলঃ “তুমি তোমার সহচর ও পরিবার পরিজনদের পক্ষ হতে কুরবানী এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। কেননা, তারা তোমার ব্যাপারে আমার নাফরমানী করেছিল। ” হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা যখন হযরত আইয়ূবকে (আঃ) আরোগ্য দান করেন তখন তিনি তার উপর সোনার ফড়িং সমূহ বর্ষণ করেন। হযরত আইয়ুব (আঃ) তখন ও গুলি হাতে ধরে ধরে কাপড়ে জমা করতে শুরু করেন। ঐ সময় তাকে বলা হয়ঃ “হে আইয়ুব (আঃ)! এখনও তুমি পরিতৃপ্ত হওনি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনার রহমত হতে কে পরিতৃপ্ত হতে পারে। আল্লাহ তাকে বলেন“হে আইয়ূব (আঃ)! তোমার আহাল (পরিবার পরিজন) সব জান্নাতী। তুমি যদি চাও তবে তাদের সবাইকে দুনিয়ায় এনে দিই, আর যদি চাও তবে তাদেরকে তোমার জন্যে জান্নাতেই রেখে দিই এবং প্রতিদান হিসেবে দুনিয়ায় তোমার তাদের অনুরূপ প্রদান করি। ” তিনি বললেনঃ ‘না, বরং তাদেরকে জান্নাতেই রেখে দিন। তখন তাদেরকে জান্নাতেই রেখে দেয়া হয় এবং দুনিয়ায় তাঁকে তাদের অনুরূপ প্রতিদান দেয়া হয়। মহান আল্লাহ বলেনঃ এটা ছিল আমার বিশেষ রহমত এবং ইবাদতকারীদের জন্য উপদেশ স্বরূপ। এসব কিছু এজন্যেই হলো যে, বিপদে পতিত ব্যক্তিরা যেন হযরত আইয়ুবের (আঃ) নিকট হতে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং ধৈর্য হারা হয়ে যেন অকৃতজ্ঞ না হয়ে যায়। আর লোকেরা তাদেরকে খারাপ বান্দা বলে ধারনা না করে। হযরত আইয়ূব (আঃ) ছিলেন ধৈর্যের পর্বত স্বরূপ এবং স্থিরতার নুমনা ছিলেন। আল্লাহর তাকদীরের লিখন ও তাঁর পরীক্ষার উপর মানুষের ধৈর্য ধারণ করা উচিত। এতে যে তাঁর কি হিকমত বা রহস্য নিহিত রয়েছে তা মানুষের জানা নেই।
আপনার মতামত দিন