একটি দেশ বা সমাজে নানা প্রকারের লোক বসবাস করে।বিভিন্ন ধরনের মানুষের মানুসিকতা ও বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।প্রথমেই চাষাবাদের ক্ষেত্র যদি ধরা হয় তবে দেখা যাবে বিভিন্ন চাষীর চিন্তা চেতনা বিভিন্ন ধরনের,মৌসুমী ফসলের সময় বিভিন্ন জন বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করে নিজের চাহিদা এবং সামর্থের উপর ভিত্তি করে।ব্যবসায়িকদের ক্ষেত্রে ও একই রকম,চাকুরী জীবিরাও তাদের মেধা ও যোগ্যতার মাপ কাঠিতে বিভিন্ন জন বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত থাকে।রাজনীতি বীদরাও সবাই একই রকম রাজনীতি করেনা,মনের চাহিদা আদর্শ এবং আত্ম উপলব্ধি থেকে বিভিন্ন মতাদর্শের সাথে রাজনীতি করে থাকে। সর্বপরি সকল শ্রেনীর মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে একটি সমাজে বসবাস করে।কুলি, মজুর ,মেথর, চোর, ডাকাত, সাংবাদিক, উচু নীচু, কবি সাহিত্যিক, দার্শনিক, আলেম, জালেম ,ডাক্তার ,ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক ,জজ,উকিল আর্মি পুলিশ, সবাই সমাজের একটা অংশ।

যত ধরনের শ্রমজিবী পেশাজিবী মানুষ আছে সবার জন্য সাহিত্য কথাটা প্রযোজ্য।সমাজের  যাবতীয় অসঙ্গতি গুলোকে কবী সাহিত্যিকরা তাদের মনের ভাবগুলি কবিতা প্রবন্ধ এবং বিভিন্ন ধরনের রচনার মাধ্যম দিয়ে জাতির সামনে তুলে ধরে।এই পৃথিবীতে যত ধরনের জ্ঞানীগুনি আছে সবাই সাহিত্যের মাধ্যম দিয়েই তাদের জ্ঞানকে বিকশিত করে জ্ঞানী হয়েছে।

জ্ঞান আহরনের অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে সাহিত্য। সাহিত্যের অনেক শ্রেনী বিন্যাস আছে। আমরা এখানে ঐ সাহিত্যের অনুপস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করবো, যে সাহিত্য মানুষকে মানুষ্যত্ব রূপে গড়ে তোলে,যে সাহিত্য মানুষকে তার স্রষ্টা বিমুখ করেনা, যে সাহিত্য মানবতার পক্ষে কথা বলে ,যে সাহিত্য কুরীপুর শিহরন মুক্ত,যে সাহিত্য বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষন মুক্ত।এই সমস্ত বিষয়গুলো যখন সাহিত্যের ভিতর অনুপস্থিত থাকবে তখন মনে করতে হবে সে জাতি ধনে মানে উন্নত হলেও মানুষ্যত্ব বোধ ও নৈতিকতা তাদের মধ্যে থাকবেনা।আমরা যদি অতিতের ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দেই তবে দেখতে পাবো সুসাহিত্য চর্চার মাধ্যম দিয়েই স্পেন সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সভ্য ও উন্নত জাতিতে পরিনত হয়েছিলো। যার ছোয় হতে আমরা বঞ্চিত ছিলাম না।আমাদের দেশেও উন্নত সাহিত্যের চর্চা ছিলো ভালো ভালো কবি সাহিত্যিকদের লেখা গল্প কবিতা প্রবন্ধ রচনা পড়েই আমাদেরে দেশের সন্তানেরা নীতি নৈতিকার আলোকে জ্ঞানীগুনি হয়েছে।সম্প্রতি মানুষ শিক্ষিত হচ্ছে বড় বড় ডিগ্রী ধারী হচ্ছে অনেক অর্থবিত্তের মালিক হচ্ছে সত্য কিন্ত নীতি আর নৈতিকতা সেখানে অনুপস্থিত।বিংশ শতাব্দীর পুর্বে একটা ভালো সাহিত্যের খোজে সাহিত্য প্রেমীদের অনেক কষ্ট করে বই যোগাড় করা লাগত।সাহিত্য অনুরাগীদের সাহিত্যের প্রতি একটা নিশা ছিলো,নিজেরা সাহিত্য পড়তো আর সাহিত্যের উপদেশ মোতাবেক নিজেদের জীবন ও পরিবারকে সাজানোর চেষ্টা করতো।

ক্লাসের পরিক্ষা গুলিতে গল্প কবিতা প্রবন্ধের সারসংক্ষেপ বা মূল বক্তব্য লেখার উপর প্রশ্ন থাকতো যাতে একজন ছাত্র তার ভিতর সাহিত্যের অনুরাগ প্রবেশ করে।বাংগালী জাতি সত্ত্বার ভিতর যখন পাশ্চাত্যের নোংড়া সভ্যতা পিপিঁলিকার ন্যায় প্রবেশ করলো, তারপর হতেই বাংগালীরা অস্তে আস্তে সাহিত্য হতে দূরে আসতে শুরু করে।মানুষকে তার মূল্যবোধ এবং চেতনা মূলক সাহিত্য হতে দূরে সরানোর জন্য পাশ্চাত্যবাদীরা তাদের রচিত সাহিত্য সমুহে রঙ্গরস ও বিপরীত লিঙ্গের অবাধ মেলামেশাকে সংযুক্ত করে সাহিত্যে রূপ দেয় এবং বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে তারা বিভিন্ন ভাষাভাষীদের মাঝে বিচরন করে মানুষকে নৈতিক সাহিত্য হতে তাদের সাহিত্যের প্রতি মনোনিবেশ করাতে সক্ষম হয়।এই আক্রমনে তারা শতভাগ সফলতা অর্জন করতে না পারলেও একটা জাতিকে তাদের প্রকৃত নৈতিক সাহিত্য মুখ ফেরাতে মুখ ফেরাতে অনেকাংশেই সক্ষম হয়েছে।তারপরেও জাতির বৃহৎ একটা অংশ সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী ছিলো।

বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাংগালী জাতির হাতে আসে তথ্য প্রযুক্তি।তথ্যপ্রযুক্তি বিজ্ঞানের একটা আশির্বাদ,তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে অনেক কঠিন কাজ সহজ হয়েছে,মানুষের অনেক কাংক্ষিত আশা পূরন হয়েছে,অনেক অজানা জিনিষের সাথে মানুষ পরিচিতি লাভ করেছে।তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার ও মানবতার জন্য অপুরনীয় ক্ষতি সাধন ও করেছে।তথ্য প্রযুক্তির সস্তা ব্যবহার মানুষের ভিতর যখন থেকে শুরু হয়েছে তখন হতেই আস্তে আস্তে মানুষ সাহিত্য হতে দূরে সরে যাওয়া শুরু করেছে।মানুষের মাঝে বই কেনার যে একটা নেশা ছিলো প্রযুক্তি এখন সে নিশাকে নব্বই শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে।যারা বই পড়তো তারা এখন মোবাইলে ফেসবুক,ইউটিউব,বিভিন্ন সার্ভারে গিয়ে নিজের ইচ্ছামত যা দেখার তাই দেখতে পারে।

আগে বাড়িতে যদি একটা বই কিনে আনা হতো তবে বাড়ীর কর্তার পাশাপাশি সবাই ওটা পড়তে পারতো বা কি বই নিয়ে আসা হয়েছে তা সবাই জানতে পারতো।মোবাইল ,ট্যাব,ল্যাপটপ এসে জাতি ঐটা হতে বঞ্চিত হয়েছে।এখন বাবা মোবাইলে কি দেখছে সন্তান জানেনা, সন্তান মোবাইলে কি দেখছে বাবা জানেনা এই যে একটা বল্গা স্বাধীনতা এটাই জাতিকে সাহিত্য হতে অনেক দূরে নিয়ে গেছে।যে যাই বলুক বই এর মাধ্যমে সাহিত্য পড়ে সাহিত্যের যে প্রান খুজে পাওয়া যায়, প্রযুক্তির মাধ্যমে সেইটা পাওয়া যায়না। প্রযুক্তি আসার পর সাহিত্য এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে।আগেকার লেখকেরা কাগজের পাতায় পান্ডুলিপি আকারে সাহিত্য রচনা করতো , আর এখন অধিকাংশ লেখকেরা কম্পিউটার,ল্যাপটপ,ট্যাব বা মোবাইলের ভিতর লিখে থাকে।প্রবন্ধ রচনা গল্প কবিতা লেখার জন্য অসংখ্য ব্লগ তৈরী হয়েছে যেখানে নবীন প্রবীন সকল ধরনের লেখকেরা তিনাদের লেখা লিখে থাকেন।অনেকে আবার ফেসবুক টুইটারে তাদের লেখনী সমুহ পোষ্ট করে থাকে।আবার অনেকের ব্যক্তিগত ব্লগ আছে সেখানে তারা তাদের সাহিত্য সমুহ লিখে থাকে।

বিংশ শতাব্দীর নুতন প্রজন্মের লেখকেরা প্রযুক্তির ব্যবহারে যে সমস্ত সাহিত্য রচনা করছে আমি তার উপরে একটা জরিপ চালিয়ে লক্ষ্য করলাম নব্বই শতাংশ লেখা প্রেম বিরহ,হিংস্রতা আর যৌন আবেগময়ী লেখা। দশভাগের ভিতর পাঁচভাগ লেখা ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য কোন বিশেষ পছন্দের মানুষের নামে লেখা।বাকী পাঁচভাগ দেশ ও সাহিত্য নিয়ে লেখা।পৃথিবীর একটা সভ্য জাতীর কতটুকু অধপতন হলে তাদের ভাষা ও মানবতাবাদী সাহিত্যের সমাধী হতে পারে তা গভীর ভাবে জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ভাবার অবকাশ আছে।জাতী ধনে মানে অর্থে বিত্তে সম্মান ও শক্তিতে অনেক এগিয়ে গিয়েছে একটি জিনিষকে হারিয়ে তা হচ্ছে মানষ্যত্ববোধ আর মানবতা।আজ পিতা সন্তানকে হত্যা করছে,সন্তান মা বাবাকে হত্যা করছে,স্বামী স্ত্রীকে স্ত্রী স্বামীকে হত্যা করছে,পিতা কর্তৃক কন্যা ধর্ষন,শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষন সহ হাজারো অপরাধ প্রকাশ পাচ্ছে।জাতির জন্য এখনো সময় আছে,জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের উচিৎ সু সাহিত্য রচনার এবং চর্চার মাধ্যম দিয়ে জাতিকে আবার সঠিক সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে হবে।মৃত্যু সাহিত্যকে আবার প্রান দিয়ে জাতিসত্তাকে সাহিত্যের অনুরাগী করতে হবে।


আপনার মতামত দিন