স্বভাবগত ভাবে মানুষ শান্তি প্রিয়তাকে ভালবাসে।পৃথেবীর সব চাইতে দুধর্ষ খারাপ সন্ত্রাসীটা ও কোন ঝামেলা তার মাথায় আসুক এটা সে চাইনা।কেউ শুয়ে খেতে পারলে সে বসে খাওয়ার পক্ষে যাবেনা এতে তার আয়েশ বিঘ্নিত হবে কিন্ত মানুষের জীবন কি আসলে এভাবে চলে? সবার পক্ষ হতে একটাই উত্তর আসবে, না।পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের এত পরিমান সম্পদ আছে যে, তাদের কয়েক পুরুষ যদি সেগুলো বসে বসে খালী খরচ করতে থাকে তাও তা শেষ হবেনা।তারপরেও কাজ কর্মে বা কোন পেশায় নিজেদেরকে নিয়োজিত না রেখে খালি বসে বসে খরচ করছে প্রতিবন্ধী ছাড়া এমন মানুষের সন্ধান পৃথিবীতে এখনো মেলেনি।সকাল বিকাল একটু হাটাহাটি পাইচারী হলেও মানুষ করে এটা মানুষের সৃষ্টিগত স্বভাব,মানুষ যতই শান্তিকে ভালোবাসুক বন্দী শিকল পরা কয়েদী ব্যতিত সে একজায়গায় শুয়ে বসে কখনো কাটাতে পারবেনা।যদি মানুষের জীবনের সারসংক্ষেপ বলা হয় তবে এভাবে বলা যায় যে, মানুষ দুনিয়াতে এসছে,এবাদত বন্দেগীর পাশাপাশি সে কাজকর্ম করবে,থাকবে খাবে এভাবেই শিশু থেকে কিশোর ,যৌবন,সংসার, বৃদ্ধ তারপর একদিন চুড়ান্ত ডাকে সাড়া।এই দেড় লাইনের ভিতরে মানব জীবনে যে কত বাঁক আর কর্ম প্রনালী জড়িয়ে আছে যার ইয়াত্তা নেই।মানব জীবনের প্রতিটা কাজই এবাদত,যদি কাজ সমুহ নিয়ম মেনে করা হয় তবে ঐ কাজটির ভিতর দুটি কল্যান থাকে।একটি হলো কাজের বিনিময়ে দুনিয়াতে কল্যান দান করা হয় আর দ্বিতীয়তঃকাজটি এবাদতের মর্যাদা পাওয়ায় ছওয়াব এর দ্বারা আখেরাতে ও কল্যান দান করা হবে।দুনিয়ার কাজ সমুহ এবাদতের মাধ্যমে সম্পূর্ণ করা কিন্ত অনেক খেয়াল ও ধ্যান কষ্টের বিষয়,যেমন আমরা যখন কাঁপড় পরিধান করি বা জুতা পরিধান করি তখন আমাদের কজনের এ খেয়াল থাকে যে জামাটি দোয়া পড়ে ডান দিক দিয়ে পরিধান শুরু করতে হবে,জুতাটি পরার সময় দোয়া পড়ে আগে ডান পায়ে পরিধান করতে হবে,এমনি সকল কাজ যখন দোয়া পড়ে নিয়োম মত করা হবে তখন দুনিয়াবী ঐ কাজ সমুহ এবাদতের মর্যাদা পাবে।জুতা,জামা পরছি,কাজ কিন্ত এমনিতেই করতে হবে বা করছি,শুধু একটু খেয়াল আর পরিকল্পনার অভাবে আমরা অনেক ছওয়াব হতে বঞ্চিত হচ্ছি।আমাদের আজকের প্রবন্ধের বিষয়ের সাথে উপরোক্ত কথা গুলোর বাহ্য দৃষ্টিতে মিল না মনে হলেও এর শিকড় কিন্ত অনেক গভীরে গিয়ে মিলিত হয়েছে।খোদায়ী নিয়ম মেনে একজন মুমেন যখন দুনিয়াতে কাজ কর্ম করবে,হঠাৎ কোথা হতে তার উপর দৈব কিছু বিপদ আপদ এসে হাজির হবে তা সে নিজেও জানেনা।শান্তির মাঝেই এ বিপদগুলো এসে বাহ্য দৃষ্টিতে মনে হয় সব লন্ডভন্ড করে দিবে।এই সমস্ত বিপদ উম্মতের জন্য নুতন না, এগুলো নবী রাসূল এবং আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত বান্দাদের উপর যুগ যুগ ধরে বিপদ মছিবতের ধারা অব্যাহত আছে।মনে রাখতে হবে বিপদ ছিলো,বিপদ আছে,বিপদ আসবে,সমাধান আছে।মক্কায় নবী সঃ দ্বীন প্রচার করছেন,চতুর দিক হতে অত্যাচার অবিচারের সাড়াশী অভিযান অব্যাহত,ষড়যন্ত্র এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে প্রিয় মাতৃভূমিতে আর থাকা সম্ভব হচ্ছেনা,এটা কি নবীর জন্য কম বড় বিপদ?নবীজি অতি ধৈর্যের সাথে বিপদের মোকাবেলা করলেন হিজরতের মাধ্যম দিয়ে,বিপদ দূরিভুত হয়ে গেলো।নবীজি সফলতার স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন,শত হাজার বিপদে নবী সঃ এবং সাহাবীগণ ধৈর্য্যচ্যুত না হয়ে কৌশল ও বুদ্ধি খাটিয়ে ঈমানী মজবুতের উপর দাঁড়িয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে সকল বিপদের মোকাবেলা যখন করলেন তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দান করলেন। গোটা জাজিরাতুল আরবে ইসলামী রাষ্ট্রের সফলতার বীজ বপন করে দুনিয়া ব্যপি শুরু করলেন ইসলামের প্রচার।পৃথিবী সৃষ্টির পর হতে এমন কোন নবী রাসূল ছিলোনা যিনাদের উপর বিপদ মসিবত আসেনি।আবার বিপদ মসিবত গুলো সারাজীবন স্থায়ী ও হয়ে থাকেনি।বান্দা যখন কোন বিপদে পড়ে এবং সাথে সাথে ওজু করে দু রাকায়াত নামাজ পড়ে সিজদাতে আল্লাহর দরবারে বিপদ মুক্তির প্রার্থনায় চোখের জ্বলে বুক ভাষায় তখন কায়েনাতের মালিক তার খুব নিকটে এসে যায়।বিপদ যখন দুরিভুত হয়ে যায় বান্দা তখন প্রবল প্রশান্তি লাভ করে,মুমেনের উপর বিপদ আসে বান্দা আর আল্লাহর সাথে মধুর সম্পর্ক স্থাপনের জন্য।মুমেনের জীবনে সমস্যা না থাকলে মুমেন ইবাদতে প্রশান্তি লাভ করে না।বিপদে পড়লে কখনো মন খারাপ করা যাবেনা,হতাশ হওয়া যাবেনা,বিপদাপদ দিয়ে আল্লাহ মুমেনকে এগিয়ে নেন যাতে মুমেন বান্দা আল্লাহর হুকুমের উপর অবিচল থাকতে পারে।গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করলে দেখা যাবে দুনিয়াতে মুমেন বান্দার বিপদ অফুরন্ত,।তার অর্থ এই নয় যে মুমেনকে আল্লাহ বাধ্য করে তার অনুগত করে রেখেছে,বরং মুমেনের বিবেক বিপদাপদকে স্বানন্দে গ্রহন করে এবং ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে মধুর সম্পর্ক গঠন করে জীবনকে সুখময় করে।দুনিয়াদাররা মুমেনের এ বিপদকে বাঁকা নজরে দেখতে থাকে।
আপনার মতামত দিন