সম্প্রতি উত্তর কলম্বিয়ার একটি পরিত্যক্ত কয়লাখনিতে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রায় ৫০ ফুট বা ১৪ মিটার লম্বা এবং ১ টনের বেশি ওজনের একটি বিশালাকার সাপের ফসিল। এই পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রাগৈতিহাসিক সকল সাপের মধ্যেই এটিই সবচেয়ে বড়। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন, টাইটানোবোয়া চেরোনোসিস।

titanoboa1

টাইটানোবোয়া চেরনোসিস আজ থেকে ৬০ মিলিয়ন বছর আগে কলম্বিয়ার জলাভূমিতে পাওয়া যেত। এই টাইটানোবোয়াগুলো ছিল বর্তমানের বড় আকারের এক একটি অ্যানাকোন্ডার চেয়ে প্রায় ১০গুন বড়। এরা এক একটি এক গালে গিলতে পারতো বড় আকারের কুমির। বিজ্ঞানীরা বলেন, সাপ তার শরীরের তাপমাত্রার সাথে পরিবেশের তাপমাত্রার খাপ খাওয়াতে পারে না, ফলে শীতের সময় তারা গর্তে প্রবেশ করে। কিন্তু আজ থেকে ৬০ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর তাপমাত্রা ছিল আরো উত্তপ্ত ফলে পরিবেশগত কারণে এই বিশালাকার সাপের সৃষ্টি হতো। বড় আকারের কারণে একে বেশিরভাগ সময় পানিতেই কাটাতে হতো। টাইটানোবোয়া কিন্তু বিষাক্ত কোন সাপ নয়। কিন্তু এটি শিকারকে মেরে ফেলার জন্য যে চাপ প্রদান করতো তাতেই শিকারের প্রাণ ওষ্ঠাগত।

Titanoboa-Monster-dinosaurs

শিকার হিসেবে এই প্রাণীটি খেত ৫ ফুট লম্বা কচ্ছপ এবং ২০ ফুট লম্বা কুমির। সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথসোয়ান মিউজিয়াম এই বড় আকারের সাপের একটি রেপ্লিকা প্রদর্শিত করছে। প্রদর্শিত রেপ্লিকা সাপটি যেভাবে একটি বড় আকারের কুমিরকে গিলে ফেলছে তা সত্যি ভয়ানক। একটি অ্যানাকোন্ডা সাপ কাদাময় জলাভুমি কিংবা গভীর নদীর মধ্য দিয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট শ্বাস না নিয়ে সাঁতার কাটতে পারে। প্রাণীবিজ্ঞানীরা মনে করেন, টাইটানোবোয়া তার ওজনের কারণে এতো বেশি সময় পানির নিচে শ্বাস না নিয়ে সাঁতার কাটতে পারবে না। তাই তারা সম্ভবত মাথাকে পানির উপরে রেখে সাঁতার কাটতো। ৬০ মিলিয়ন বছর আগে পেলিওসিস যুগে পরিবেশের যে তাপমাত্রা ছিল তাতে এই বিশালাকার প্রাণীগুলো টিকে থাকতো। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমান পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি আমাদের এই আশংকার দিকে নিয়ে যাচ্ছে যে, বিশালাকার প্রাণীগুলো পরিবেশে আবার ফিরে আসতে পারে। উষ্ণ রক্ত বিশিষ্ট প্রাণীগুলো যত বড় আকারের হবে ততই তারা হিমশীতল পরিবেশের দিকে ধাবিত হবে যেমন মেরুভালুক। আবার একইভাবে শীতল রক্ত বিশিষ্ট প্রাণীরা চাইবে উত্তপ্ত পরিবেশ।

titanoboa-getty

টাইটানোবোয়াগুলো কেন বিলুপ্ত হয়েছে তা নিয়ে মতভেদ আছে কোন কোন প্রাণীবিদ বলে থাকেন, পরিবেশের তাপমাত্রা হ্রাসের ফলে তারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সমর্থ হয়নি। আবার অন্যরা মনে করেন, বিশালাকার এবং মাংসাশী হওয়ার কারণে এর খাদ্যের সংকট দেখা দেয় ফলে বিলুপ্ত হয়।

লেখক পরিচিতি
অচলা
Author: অচলা
জন্মের পর থেকেই যার চারপাশে দাগ দিয়ে চলার সীমানা এঁকে দেয়া হয়েছে, বিধি-নিষেদের প্রাচীরের অভ্যন্তরেই পার হয় যার জীবন, সেই বাঁধার দেয়ালকে ভেঙে দেয়ার ইচ্ছাতেই সমমনা লোকদের যাতয়াত ক্ষেত্র বাংলা ব্লগ জগতে অচল পথিক ‘অচলা’ র পথচলা।
আমার ব্লগ সমুহ:

আপনার মতামত দিন