images2

১৯৭০ সালে পাকিস্তানী সৈরাচারী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের অধীনের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬০ টি আসন (৩৮% ভোট) পেয়ে নিরঙ্কুস বিজয় অর্জন করে। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি পাকিস্তান পিপলস পার্টি পায় ৮১ টি আসন এবং ১৯% ভোট। ঐ নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ এবং প্রায় ৬৫% ভোট পড়ে । সর্বমোট ৫৬,৯৪১,৫০০ রেজিস্টার্ড ভোটারের মধ্যে ৩১,২১১,২২০ জন পূর্ব পাকিস্তানের এবং ২৩,৭৩০,২৮০ জন ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের ভোটার। 

 

এখন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী গণতন্ত্রের মানসকন্যা দাবিদার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অধীনের নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত। বাঁকি ১৪৭ আসনের ভোটে সরকারের দাবী ৩৯ % ভোট পড়েছে । এক্ষেত্রে আমরা পত্র পত্রিকায় দেখি কেউ কেউ একা ৪০০/৫০০ টি পর্যন্ত ভোট দিয়েছে। আমাদের অনেকের বন্ধুবান্ধব এবং আত্নীয় সজনদের অনেককেই বলতে শুনি তারা এবার ১০/২০ টি করে ভোট দিয়েছে, ৮/১০ বছরের নাবালকরাও বাদ যায়নি। আবার কোন কেন্দ্রে এমন হয়েছে ৪/৫ হাজার ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৫২ জন এবং সরকারী দলের প্রার্থী ঐ কেন্দ্রে ৫১ ভোট পেয়ে বিজয়ী। কোন কোন কেন্দ্রে দেখা গেছে বেলা ২টা পর্যন্ত সর্বমোট ভোট দিয়েছেন ৮/১০ জন কিন্তু বেলা ৪টার পর গননার সময় দেখা যায় মোট ২০০০ ভোটারের মধ্যে ৯৪% ভোটারই ভোট দিয়েছেন। সবকিছু বিবেচনা করলে হয়ত বৈধ ভোট পড়েছে হয়ত ৭% এর কম। ফলাফল সরকার যা চেয়েছে তাই হয়েছে।

 

দ্ধিতীয় বিশ্বযুদ্বের নায়ক হিটলারের পর ইতিহাসের ভয়ঙ্কর তম খুনি ক্ষমতালোভী কুখ্যাত ইয়াহিয়া খানের অধীনে যদি গণতন্ত্রের প্রাগঐতিহাসিক যুগে (১৯৭০ সালে) একটি সুষ্টু নির্বাচন সম্ভব হয় এবং বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ জনগনের ভোটের রায়ে বিজয় অর্জন করতে পারে তাহলে ২০১৪ সালে কেন হচ্ছে না। আমাদের হতদরিদ্র দেশে ৬০০ কোটি টাকা বিসর্জন দিয়ে সরকারের মঞ্চস্ত এবং গণতন্ত্র বিসর্জিত নির্বাচন-নির্বাচন নাটক দেখতে চাই না। যদি প্রশ্ন করা হয় কার অধীনে সুষ্টু নির্বাচন সম্ভব? ৭১ এর খুনি ইয়াহিয়া খান নাকি মুক্তিযুদ্ধের পৃষ্ঠপোষক এবং গণতন্ত্রের রক্ষক দাবিদার শেখ হাসিনার অধীনে। এ প্রশ্নের উত্তর আমার বলার প্রয়োজন নেই সবাই নিজের মত করে উত্তরটি ভেবে নিন। কারন এ বিতর্কে যেতে চাই না। আমরা দেশের ১৬ কোটি মানুষ দেশের শান্তি চাই। ১৯৭১ সালে দেশের ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন বিসর্জন দিয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের শান্তির জন্য, সার্বভৌমত্বের জন্য, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারের জন্য, ভোট দেওয়ার অধিকারের জন্য যে ভোট এক জন যোগ্য ব্যাক্তিকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে এবং বাধ্য করবে জনগনের মতামতকে মূল্যায়ন করতে, শ্রদ্ধা করতে অন্যথায় এই ভোটই আবার তাকে লাথি দিয়ে আস্তাখুঁড়ে নিক্ষেপ করবে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে নির্বাচনের প্রচেষ্টা আমরা ১৯৮৬ সালে, ১৯৮৮ সালে, ১৯৯৬ সালে, ২০০৬ সালে দেখেছি। ২০১৪ সালে আর দেখতে চাই নি। সংবিধানের জন্য নির্বাচন না বরং মানুষের জন্য সংবিধান তৈরী করুন, যে সংবিধান মানুষের ও দেশের কল্যাণ করবে।

লেখক পরিচিতি
এম, এইচ, মিনহাজ
আমি বিভিন্ন বাংলা/ইংরেজী ব্লগের একজন অনিয়মিত এবং সখের ব্লগার। তবে নিয়মিত লেখার ইচ্ছে থাকলেও অনিয়মিত ভাবেই পাঠকদের বিরক্ত করে থাকি। আমার লেখার বিষয়বস্তু- যা মনে আসে তাই। কারও কাছ থেকে বাহবা পাওয়ার জন্য লিখি না। কেউ আমার লেখা পছন্দ করলে খুশি হই তবে অপছন্দ করলেও লেখালেখি বন্ধ করার কোন অবকাশ নেই, কারন আমি একান্ত সখের বশেই লেখালেখি করি।
আমার ব্লগ সমুহ:

মন্তব্যসমুহ  
জীবন
+2 # জীবন 2014-02-15 03:38
চমৎকার লিখেছেন- ১৯৭১ সালে দেশের ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন বিসর্জন দিয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের শান্তির জন্য, সার্বভৌমত্বের জন্য, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারের জন্য, ভোট দেওয়ার অধিকারের জন্য যে ভোট এক জন যোগ্য ব্যাক্তিকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে এবং বাধ্য করবে জনগনের মতামতকে মূল্যায়ন করতে, শ্রদ্ধা করতে অন্যথায় এই ভোটই আবার তাকে লাথি দিয়ে আস্তাখুঁড়ে নিক্ষেপ করবে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে নির্বাচনের প্রচেষ্টা আমরা ১৯৮৬ সালে, ১৯৮৮ সালে, ১৯৯৬ সালে, ২০০৬ সালে দেখেছি। ২০১৪ সালে আর দেখতে চাই নি। সংবিধানের জন্য নির্বাচন না বরং মানুষের জন্য সংবিধান তৈরী করুন, যে সংবিধান মানুষের ও দেশের কল্যাণ করবে।
প্রতিউত্তর
আপনার মতামত দিন