ইমাম আব্দুল হান্নান ইতেকাফ ইসলামী শরীয়তে ফরজ বা সরাসরি ওয়াজিব এবাদত না হলেও ইতেকাফের ব্যপ্তি উম্মতের জন্য অনেক ওজনদার।কোন এলাকা হতে সবাই যদি ইতেকাফ হতে বিরত থাকে তবে ঐ এলাকার সমস্ত মানুষ গোনাহগার হবে।আর একজন মানুষ যদি ইতেকাফ করে তাহলে সবাই গোনাহ হতে বেঁচে যাবে।তাহলে বুঝতে হবে এর হকিকত কি? আর এক্বামাতে দ্বীন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইতেকাফের প্রভাব কি? আমি ইতেকাফের ফজিলত বর্ণনা করবো না,সংক্ষিপ্ত পরিসরে ইকামাতে দ্বীন সম্পর্কে একটু ধারনা দিচ্ছি। আমরা প্রথমে ইকামত সম্পর্কে তারপর দ্বীন সম্পর্কে ধাপে ধাপে বোঝার চেষ্টা করি, إقامةঃ আরবি শব্দ,যার অর্থ দাড় করা,প্রতিষ্ঠা করা,অটল রাখা, কোন মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করা। ‎দ্বীন (دينঃ এর অর্থ পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যস্থা। শরীয়তের পরিভাষায় ইসলামি জীবন ব্যবস্থাকে একটি মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করার নামই এক্বামাতে দ্বীন। ইক্বামতে দ্বীনের কাজ শুরুঃ এক্বামাতে দ্বীনের যাত্রা শুরু হয় ব্যক্তি জীবনের সাড়ে তিন হাত শরীর হতে পারিবারিক জীবনের মধ্য দিয়ে বাড়ির দরজা পার হয়ে সামাজিক রন্ধে রন্ধে হয়ে রাষ্টীয় জীবনের সর্বোচ্চ চুড়া পর্যন্ত জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা করাই এক্বামাতে দ্বীনের কাজ। ইতেকাফ কিভাবে এক্বামাতে দ্বীনের উপর প্রভাব ফেলেঃ ইতেকাফরত ব্যক্তি দুনিয়াবী কোন কাজ কারবার যখনই করতে যায় তখনই মনস্তাত্ত্বিক ভাবে তার ভিতর খটকা লাগে যে আমি ইতেকাফে আছি এ কাজ করা যাবেনা।মনের ভিতর থেকে কে যেন নিষেধ করে দুনিয়াবী কাজ কারবার করা যাবেনা।নফস শয়তান যদিও নানা দুনিয়াবী কাজ কারবারের কথা মনে করিয়ে দেই তথাপিও আল্লাহর বান্দা দশটা দিন নিজের খারাপ নফসের সাথে যুদ্ধ করে ইতেকাফের হক্ব আদায় করে।প্রতিটা মুহূর্তে তাকে নফস শয়তানের হাতছানি আল্লাহর নাফারমানী দুনিয়াবী চিন্তা চেতনা থেকে বেঁচে থাকতে হয়।এই ব্যক্তিগুলো ইতেকাফ হতে যখন বেরিয়ে যায় তখন আল্লাহর নাফারমানী সংঘটিত হবার কথা সে ভূলে যায়। তার মানে সে ইতেকাফের প্রশিক্ষন গ্রহন করেনি।ইতেকাফ থেকে বেরিয়ে যখন সে জীবনের প্রতিটা বাঁকে বাঁকে যাবতীয় খোদাদ্রহী কাজ থেকে নিজেকে বিরত রেখে অন্যদের দ্বারা যাতে খোদাদ্রহীতা সংঘটিত না হতে পারে তার প্রচেষ্টা করা।ইতেকাফ অবস্থাতে দশ দিনের জন্য একজন মানুষ যদি দুনিয়ায়বী কাজ কারবার আল্লাহর নাফরমানী হতে বিরত থাকতে পারে তাহলে ইতেকাফের বাহিরে এসে তাঁকে জীবনের বাঁকে বাঁকে এক্বামাতে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর যাবতীয় নাফরমানী হতে দূরে থাকায় এতেকাফের শিক্ষা। এক্বামাতে দ্বীন প্রতিষ্ঠায় করনীয়ঃ বর্তমান পরিস্থিতিতে এক্বামাতে দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা কারী নিজের পরিবার এবং নিকট আত্মীয়দের কাছে সরাসরি দাওয়াতী কাজ করলেও সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় ভাবে ইক্বমতে দ্বীন প্রতিষ্টার ক্ষেত্রে তাকে তিনটি নীতি মেনে কাজ করতে হবে। ১।আল্লাহর নাফারমানীর সরাসরি বাঁধা দেবার শক্তি যেহেতু তার নেই সেজন্য ২নং পন্থা গ্রহন করা লেখনী অথবা দাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর নাফরমানী সম্পর্কে সতর্ক করা। ৩।সেটাও যদি সম্ভব না হয় তবে নাফারমানদের সম্পর্কে অন্তরে ঘৃনার পোষন করা এবং নাফারমানদের সমস্ত সংশ্রব হতে নিজ ও পরিবারকে বাচিয়ে রাখা।

 

ব্যাক্তিগত জীবনে ইক্বামতে দ্বীনঃ ১ম পর্ব

আচ্ছলাতু খইরুম মিনান নাউম,,শুরু ব্যক্তি জীবনে ইক্বামতে দ্বীনের কাজ,ফজরের নামাজ জামাতে পড়তেই হবে।নামাজের পূর্বের পাক পবিত্রতা সব সেরে নিয়ে নিজের পবিত্র পোশাকটা পরে নামাজে হাজির হতেই হবে।নামাজ শেষ কুশল বিনিময় করে ইক্বামতে দ্বীনের জন্য যথাসাধ্য দুই একজন মানুষ কে ঐ সময়েই দাওয়াত প্রদান করা।ফজরের নামাজ শেষে বাড়িতে এসে নিশ্চিত হওয়া পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ফজরের নামাজ পড়েছে কিনা?সকালে কর্মে বের হওয়ার পূর্বে দিনটাকে দুই ভাগে ভাগ করা, দ্বীন+ দুনিয়া। বেঁচে থাকতে গিয়ে আমি দুনিয়ার কাজ যতটুকু করবো তাতে যেন বিন্দু পরিমান দ্বীনের বিচ্যুতিমূলক কোন কাজ না হয়।যেমন দুনিয়াবী কাজ করতে গিয়ে আমার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কি আমার কথা শুনছে না আল্লাহর কথা শুনছে? নিশ্চিত হতে হবে আমার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আল্লাহর কথা শুনছেন।দুনিয়াবী কাজ কারবার করতে গিয়ে ঘুষ খেলাম সুদ খেলাম,চুরি করলাম,কাউকে ঠকালাম ইত্যাদি অন্যায় যেন না হয়।আর দুনিয়াবী কাজ করতে গিয়ে দ্বীনের অর্ধেক কাজ যে বাকি আছে সেটা যেন চলমান থাকে।

ব্যাক্তিগত জীবনে ইক্বামতে দ্বীনঃ২য় পর্ব

মানুষের অন্তরের মধ্যে ইক্বামতে দ্বীনের যে একটা সরল রাস্তা আছে ইক্বামতে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য যে রাস্তা ধরে সে চলবে শয়তান বহু আগে হতে সেই রাস্তায় চাক্রান্তের জ্বাল ফেলে অপেক্ষমান।আল্লাহ বলেন,قَالَ فَبِمَاۤ اَغۡوَیۡتَنِیۡ لَاَقۡعُدَنَّ لَہُمۡ صِرَاطَکَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ ۙ (ইবলীস) বললঃ আপনি যে আমাকে পথভ্রষ্ট করলেন এ কারণে আমিও শপথ করে বলছি - আমি আপনার সরল পথে অবশ্যই ওৎ পেতে বসে থাকব।( আরাফ ১৬ আয়াত) ثُمَّ لَاٰتِیَنَّہُمۡ مِّنۡۢ بَیۡنِ اَیۡدِیۡہِمۡ وَ مِنۡ خَلۡفِہِمۡ وَ عَنۡ اَیۡمَانِہِمۡ وَ عَنۡ شَمَآئِلِہِمۡ ؕ وَ لَا تَجِدُ اَکۡثَرَہُمۡ شٰکِرِیۡنَ অতঃপর আমি তাদের সম্মুখ দিয়ে, পিছন দিয়ে, ডান দিক দিয়ে এবং বাম দিক দিয়ে তাদের কাছে আসব, আপনি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবেননা।( আরাফ১৭ আয়াত)ইক্বামতে দ্বীন প্রতিষ্ঠায় প্রচেষ্টা কারীদের মনের মধ্যে আল্লাহর স্থানে শয়তান আর একজনকে খোদা সৃষ্টি করে দেবার চেষ্টা করবে এই জন্য যে মানুষ সেগুলোর প্রভাবে পড়ে ইক্বামতে দ্বীন থেকে যেন বিচ্যুত হয়

 


আপনার মতামত দিন