cricket 001

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সম্প্রতি একটি বড় জয় পেয়েছে। এজন্য তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। এ বিজয়ে সবার মত আমিও আনন্দিত। তারপরও আমাকে লিখতে হচ্ছে-

আমাদের ক্রিকেট দল জয় পাওয়ার জন্য একটি মাত্র প্রতি পক্ষ দলই মনে হয় আছে, সেটি হচ্ছে জিম্বাবুয়ে। এদের বিরুদ্ধে খেললে আমাদেরকে ৫৪ রানের লজ্জা পেতে হয় না। বরং আমরা হয়ে উঠি পরাক্রমশালী রাজাধিরাজ। কিন্তু আমাদের মতই স্বীকৃত ও কাগুজে ক্ষমতা প্রাপ্ত ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়ার মত দলও আছে। তাদের তুলনায় আমরা কি?

কেউ হয়ত বলবেন আমরা নতুন। আমি বলি আফগানিস্তান, কানাডার সাথে নাকানি-চুবানি ভূলে গেছেন?

সত্য বলুন- বাঘ নেই বনে বিড়াল রাজা। এ রাজা এখন আর আমাদের কাম্য নয়। আমরা বাঘকেই রাজা হিসেবে পেতে চাই। যে বাঘ স্বীয় শক্তিতে অন্য বাঘ-শিংহের সাথে লড়াই করে রাজা হবে।

১৯৯৭ সালে ওয়ানডে স্টেটাস এবং ২০০০ সালে টেস্ট খেলার মর্যাদা পেয়েছি। তখন সারা দেশে ক্রিকেটের গণজোয়ার বইছিল। এটাকে বাংলাদেশে ক্রিকেটের গন অভ্যুথ্থানও বলতে পারেন। আজ আছে? না কি যাদুঘরে যাচ্ছে?

কিন্তু আমাদের এই গণজোয়ারে আইসিসির বাঁকি দেশগুলির কি আসে যায়। আমরা কিসের জোরে তখন ক্রিকেটে এত দ্রুত এত মর্যাদা পেয়েছি? তখনকার সময়ে আমাদের ক্রিকেটদলের তুলনায় কেনিয়া কতটুকু শক্তিশালী ছিল তা কি কেউ জানেন? তারা একটি বিশ্বকাপের সেমিফাইলও খেলেছে কিন্তু আজ মাঠে নেই। ওয়ানডে এবং টেষ্ট স্টেটাস তো দূরে। কিন্তু কেন? কেন আমাদের আইসিসি বিজয়ী এবং ওয়েষ্টিন্ডিজ থেকে আগত কোচকে দেশ থেকে বেড় করে দেয়া হয়েছিল? 

আজ ১৭ বছর ধরে আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলছি এবং ভবিষ্যতেও খেলতেই থাকব। সে সময় কোন খেলোয়ার একরান পেলেও রাস্তা-ঘাটে, মাঠে এমনকি ক্লাসে থেকে খবর পেয়েও সবাই চিৎকার করে উঠত। ছেলেরা অলিগলিতে ক্রিকেট খেলত। ক্রিকেটের জয়ধ্বনি করত। স্কুলে ক্লাস চলা কালীন সময়ে হেড ফোন দিয়ে রেডিও চালিয়ে রেখেছি, আর ৪/৬ রানের চিৎকার শুনে স্যারও চিৎকার দিয়ে উঠত। কিন্তু আমাদের ক্রিকেট বোর্ড অনেক আগে থেকেই সবার গলা টিপে ধরেছে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিজয়ে এখন আমরা যে চিৎকার দেই সেটি হাসপাতালের বিছানায় শোয়া মৃত্যুপথ যাত্রী রোগীকে ডাক্তার বাঁচার আস্বাস দিলে রোগীর গলা দিয়ে যে ক্ষীন স্বর বের হয় সেরকম। রোগী মায়াভরা চোখে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে ভাবে পৃথিবীর আলো আর কিছুক্ষন দেখতে পারবো তো?? আমরা ক্রিকেট দর্শকরা দলের দিকে তাকিয়ে ভাবি এই আনন্দ আর অল্প কিছুক্ষন স্থায়ী হবে তো?

বাঘ হয়ে যে ক্রিকেট দলের উথ্থান হয়েছিল তা আজ বিড়াল বৈকি তেলাপোকায় পরিনত হয়েছে।

আমার লেখায় যারা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবেন তাদেরকে বলি ১২-১৩ বছর আগে আমরা তো স্বপ্ন দেখতাম আগামী দশ বছরে আমাদের দল বিশ্বের প্রথম সারির দলগুলির মত একটি পরিপক্ক দলে পরিনত হবে। বিশ্বকাপ আমাদের ঘরেও আসবে। আমরা আমাদের দলকে নিয়ে আজ গর্ব করি আগমীতেও করব।

আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আপনি আজকে কি স্বপ্ন দেখেন? আমাদের প্রিয় এই ক্রিকেট দলটাকে নিয়ে? আর কত দশক পাড় হলে আপনার এই স্বপ্ন পুরন হবে বলে আশা করেন?

দেশের সকল দেশপ্রেমিক নাগরিকের মত আমি আমাদের দেশের ক্রিকেটের একজন ভক্ত। কষ্ট তখনি পাই যখন দেখি আমরা, জাতীয় দলের ক্রিকেটারগন, ক্রিকেট বোর্ড এবং সরকার কেউই আত্নসমালোচনা করে না এবং তা পছন্দও করে না বরং ভয় পায়। সর্বক্ষনই শুধু প্রসংসা পেতে চায়। তোষামোদকারীরা সেই সুযোগটাই কাজে লাগায়।

আমি জানি আমাদের ক্রিকেটারদের সামর্থ কতটুকু। তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশাও আকাশ সমান নয়। শুধু দলের জয় প্রাপ্তিই আমাদের প্রশান্তি নিশ্চিত করে না। সম্মান জনক পরাজয়েও আমাদের ক্রিকেটারদেরকে আমরা বাহবা দেই এবং জয়ের স্বাদ পাই। ক্রিকেট জয় পরাজয়ের খেলা আমিও জানি। তাইতো আমাদের দল ভাল খেলে পরাজিত হয়ে যখন কাঁদে আমরা সন্তুষ্ট চিত্তে তাদের সাথে কান্নায় ভেঙে পড়ি।

অন্তত ১৬ কোটি মানুষের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ক্রিকেটারদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত। বোর্ডের উচিত তৃণমূল পর্যায় থেকে ভাল ক্রিকেটার খুঁজে বেড় করে আনা।
তবে ক্রিকেট বোর্ড যদি ক্রিকেটার নিয়োগের ক্ষেত্রেও সরকারী চাকরীর মত কোটা ব্যবস্থা প্রবর্তন (পর্দার আড়ালে) করে থাকে তবে আমি শ্রী শরৎ চন্দ্রের মত কখনোই বলব না ”টিকিয়া থাকাই চরম স্বর্থকতা নয়, বরং অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে কিন্তু তেলাপোকাও টিকিয়া আছে।”

লেখক পরিচিতি
এম, এইচ, মিনহাজ
আমি বিভিন্ন বাংলা/ইংরেজী ব্লগের একজন অনিয়মিত এবং সখের ব্লগার। তবে নিয়মিত লেখার ইচ্ছে থাকলেও অনিয়মিত ভাবেই পাঠকদের বিরক্ত করে থাকি। আমার লেখার বিষয়বস্তু- যা মনে আসে তাই। কারও কাছ থেকে বাহবা পাওয়ার জন্য লিখি না। কেউ আমার লেখা পছন্দ করলে খুশি হই তবে অপছন্দ করলেও লেখালেখি বন্ধ করার কোন অবকাশ নেই, কারন আমি একান্ত সখের বশেই লেখালেখি করি।
আমার ব্লগ সমুহ:

মন্তব্যসমুহ  
অচলা
+4 # অচলা 2014-11-13 02:15
ICC কে আমরা তিন জমিদারের কাছে বিনামূল্যে বিক্রি করে দিয়ে এখন শোষিত প্রজা হয়েছি। অথচ FIFA একটি স্বাধীন প্রতষ্ঠান। সেখানে যদি ইংল্যন্ড, অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকা বা ৪-৫ বার বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিল-জার্মান ি যদি মালিকানা চায় তাহলে নাকে খঁত দিয়ে জুতার মালা দিয়ে বেড় করে দেয়া হবে।

আর আমাদের ক্রিকেট তেলাপোকা হয়ে টিকিয়া থাকার পথেই চলছে।
প্রতিউত্তর
আপনার মতামত দিন