দুই বছরের মাথায় ভিতরে কোন রকম থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। হঠাৎ একদিন রাতের বেলা ৪/৫ টা কালো মাইক্রোবাসে করে বাচ্চা গুলোকে এখানে স্থানান্তর করার কাজ শুরু হয়েছে। ওখানে রান্নাবাড়ার কাজ এবং বাচ্চাদের দেখভাল করতো ঠান্ডু আর ফুলকী ওরা দুজন স্বামী স্ত্রী। গরীব হলেও ওদের আবার মিল মহব্বত খুব ভালই ছিল। বাচ্চারা কোন জংগলে যাবে সেখানে পাংখুয়া বুড়া ব্যাটার কুত্তা খাওয়ার খবর শুনে ওরা যে আর ওখানে যাবেনা দারোয়ান ভজার কাছে তা প্রায় ই বলত। ভজা এ ঘটনা বুড়াকে কখনো বলেনি। বাচ্চা গুলো এসছে l এদের খাবার, দেখভাল এখন কে করবে? বৃদ্ধ ভজার উপর চরম চটে গেল। রাগ করে ভজাকে বলল তুই আাজ হতে রান্না করবি। ভজার ও মাথা গরম, ঠিক আছে রান্না বান্না যা করার আমি করবো গেটে ডিউটি করবে কে? আপনারই তো দেখি ডিউটি করার নাম্বার। বৃদ্ধ মুচকি হেসে বললো ওরে আমার লালচাঁদ সোনারে তোমার আর রান্নাকরা ও লাগবেনা ডিউটি করাও লাগবেনা। রান্না করার জন্য আমাদের কুক চলে আসছে, ডিউটির লোকও চলে আসছে। ভজা থোতর মোতর খেয়ে বৃদ্ধর পা ধরে স্যার আমাদের কি হবে? বৃদ্ধ জোর গলায় বললো, তোরাতো ভবিষ্যৎ এর চিন্তা করিসনা, মানুষকে মূল্যায়ন করিসনা, এখন পনের দিনের বেতন পাবি নিয়ে বাড়ী যা আর কি করবি। তোরা বিশ্বস্থতা অর্জন করতে জানিসনা। সত্যি সত্যিই কিছুক্ষণ পর হুম হুম করে কয়েকটি মিলিটারী বাস ও লরি চলে আসলো। লোকজন মাল সামান ভর্তি। মালসামান নামিয়ে কয়েকজন লোক আর একটা পিকআপ ভ্যান থেকে বাকী সবাই চলে গেল। ভজারতো চাকরী নেই, ভজা পাশেই আম গাছের নীচে এমন ভাবে বসে আছে যেন আসমান জমিন সব ওর মাথার উপর ভর করেছে। বৃদ্ধ দেখেও না দেখার ভান করে সামনের অফিসে বসে আছে। অন্যদিন ভজা এতক্ষন বাসায় চলে যায় আজ আম গাছের গোড়াই বসেই আছে। রাতের বেলা ডিউটিটা সরকারী লোক এসে করে শুধু দিনের জন্য গেট দারোগা হিসাবে ভজাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ছেলেটাকে বললাম অরন্যে গোয়েন্দাবাসের অষ্টম কলামটা লেখার জন্য। ও বললো আববু আপনি কোন কল্পনা থেকে লিখছেন আমি তার ভিতর কেমনে যাবো? আর কি ভাবে লিখবো? আমি বললাম, তুই না সাহিত্যে অনার্স করছিস? তাহলে পারবিনা কেন? তুই না আমার সন্তান পিতার মনোভাব সন্তানকেতো বুঝতেই হবে। যাক সে জন্য একটু সময় ক্ষেপন হলো। খুব ভোর বেলায় ভজা চলে এসছে যদি চাকরীটা ফিরে পাওয়া যায়। ও মা সকালবেলা গেটের কাছে আসতেই নুতন দারোয়ান বাম হাত নীচের দিকে রেখে মনে হচ্ছে গোপনে তাড়াতাড়ি সরে যেতে বলছে। আর ভিতরে সরগোলের শব্দ। মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে। এর ফাঁকে ভজা কেমনে যেন বৃদ্ধকে রুমালে চোখ মুচতে দেখেছে। ভজার মনে কৌতুহল আরো বেড়ে গেল ঘটনা কি? ভজা আড়ে থেকে অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছে। কিন্ত কোন মতেই কিছু বোঝা গেলনা, দারোয়ান ও কাছে ভিড়তে দিচ্ছেনা। অবশেষে জানা গেল বাচ্চা একটা মারা গেছে। ওখানকার সব বাচ্চাইতো ভজার চেনা কে মরলো? রাত দশটা পর্যন্ত ভজা জানার অনেক চেষ্টা করলো কিন্ত কাজ হলোনা, বৃদ্ধ বাহিরে আসলে না হয় জোর করে হলেও জানতাম, মনে সন্দেহ নিয়ে ভজা আবার বাড়ী ফিরে গেল। ভজা নাছোড় বান্দা না জানা পর্যন্ত দম নিবেনা। পরদিন সকালে আবার ক্যাম্পের পাশে হাজির। ভজার ঐ দিনের পর হতে বৃদ্ধর সাথে আর কোন সাক্ষাৎ হয়নি। ভজাকে দেখার পর বৃদ্ধ দৌড়ে এসে ভজাকে জড়িয়ে ধরে কাঁন্না শুরু করে দিল, আর বলতে লাগল ও আর নেই রে ও আর নেই। ভজার চোখ বেয়ে পানি পড়া শুরু হয়ে গেল। শহরের বাড়ীতে যখন বাচ্চা রিক্রুটিং এর কাজ চলছিল তখন মায়াবী একটি বাচ্চা ছিল। বাচ্চাটি একটু বড় ছিল এই জন্য মাঝে মাঝে গেটের কাছে চলে আসত। বৃদ্ধ ভিতর হতে দৌড়ে গেটে পৌছার আগেই বাচ্ছাটি ভজার নিকট চলে আসত, ভজাও কোলে তুলে নিয়ে আবার বৃদ্ধর কোলে দিয়ে দিত। প্রায় প্রায় ছেলেটির আসাতে ওর প্রতি ভজার একটা মায়া জন্মে যায়। এই জন্য ভজা আবার মাঝে মাঝে চকলেট নিয়ে যেত। চকলেট পেয়ে বাচ্চাটাও খুব খুশি হতো।
আপনার মতামত দিন