পাগলী বানর আব্দুল হান্নান এই বানরের বাচ্ছাটা ছোটবেলা থেকেই এক ধরনের নাদুস নুদুস তবে চঞ্চলতাটা ওদের স্বভাবের চাইতে একটু বেশি। একটু বেড়ে উঠার পর ওর আচরনটা বানর পাড়ার বর্গীর মত হয়ে উঠল।ওর বয়সের সবাই যেন ওর শাসনের মধ্যে।নিজেরটা সবক্ষেত্রে ষোলআনা কানায় কানায় পূর্ন হতেই হবে।ওর বাবা সর্দার ওই সুবাদে ওর রাজত্বটা একটু বেশিই।বানর জগতে সরদারটার রাজত্ব বেশি ও যা ইচ্ছা দলের ভিতর তাই করবে ওর বলার কেউ নেই।সরদারের থেকে ছোট পুরুষ বানর গুলো সব সময় দূরে দূরে থাকে,কারো কাছে পেলেই ধরে ঘাড় মটকিয়ে দেয়।ওরা থাকতো এক শাল বাগানে শাল বাগানের পাশেই ছিল ক্যান্টনমেন্ট।সৈনিকদের বিচরন ছিল হর হামেশা।সৈনিকরা বানরের জন্য কাপড় চোপড় বাহিরে রোদে দিতে পারতোনা।বাহিরে কাপড় দেখলেই বানরেরা নিয়ে পরা শুরু করবে তবে ওদের একটা ধর্ম ওদেনকে যে খাবার দিবে ওরা তার কোন ক্ষতি করেনা।একদিন আমি ওদেরকে বাড়তি কিছু খাবার দিচ্ছিলাম,সবাই বেশ আনন্দের সাথেই খাবার নিচ্ছিল,কিছু কিছু বানর অতি উৎসাহি হয়ে আমার গায়ে উঠেও খাবার নিচ্ছিল এই অবস্থায় ভুন্দা নামের একটা লোক আধলা একটা ইট নিয়ে হাত পেছনে রেখে নিকটবর্তী হয়েই এমন ভাবে ইট মারলো আধাবয়সী বানর একটার পেটে লাগতেই কিচির মিচির করে ওর দিকে তাকিয়েই বেশিদূর যেতে পারলোনা পড়ে গেলো।আমি দৌড়ে গেলাম ওকে ধরলাম,একজনকে বললাম এক বদনা পানি নিয়ে আসতে,সব বানর আমার চারিদিকে ঘিরে ধরলো,আমি ওর মাথায় যখন পানি ঢালি ওর মা তখন সাইটে বসে অঝোরে চোখের পানি ফেলছিল আর উলুক ফুলুক তাকাচ্ছিল।আর সরদার বানরটা তম্বিগম্বি করছিল আর একটু পরপর ওর হাত পা ধরে নাড়াচ্ছিল।আমি যা বুঝলাম ও দেখতে চাচ্ছে যে বেঁচে আছে কিনা? আমি হাত পা ভালো করে ম্যাসেজ করছিলাম আর বানর গুলো আমার গা ঘেষে সবাই ঘুরাঘুরি করছিল।কয়েকজন আমার কাছে আসতে চাচ্ছিল ওরা এমন ধাওয়া করলো আর কেউ আসলোনা।বানরটার একটু চৈতন্য ফিরেছে ভাবলাম অনেকক্ষন বসে কাজ করছি মাজাটা লেগে গেছে একটু মাজা টা সোজা করার জন্য আমি যেই উঠেছি আর চার পাঁচটা বানর সামনের দুই পা জোড় হাতের মত করে ওরা যেন আমাকে বলছে যে ওকে ঠিক করে দিয়ে যা।কিছু কিছু বানর আবার আমার জামা ধরে বসিয়ে দিচ্ছে।দূর হতে সবাই মনে করছে বানর ওকে ধরেছে আর আসতে দিবেনা।যাক বেস সময় পার হবার পর বানরটি স্বাভাবিক হলেও মাজা কুজো করে খুড়িয়ে হাটছে এখন সব বানর ওর কাছে। আমি কোন মতে ওখান হতে চলে আসলাম। ভুন্দা থাকতো তিন তলায় ওর বেডটা মাঝখানেই ছিল।কর্তব্যের জন্য দিনের বেলা রুমে কেউ থাকতোনা দরজা আটকিয়ে সবাই কাজে যেত।প্রতি দিনের মত আজও সবাই কাজে গেছে এই ফাকে বানর কেমনে জানি জানালা খুলে ভুন্দার বেড বিছানা চাদর বালিশ কাঁপড় চোপড় সব বের করে নিয়ে ছিড়ে নষ্ট করে ফেলেছে। ও যে চৌকিতে থাকতো সেখানে পেশাব পায়খানা করে অবস্থা খারাপ।পরে জানলাম বানর হনুমান ওদের স্বভাব নাকি ওরকমই,যারা ওদের ক্ষতি করবে তার ক্ষতির আপ্রান চেষ্টা ওরা করবেই।বল্টু মিয়ার খুব শখ বানরের বাচ্ছা পোশার কিন্ত সুযোগ হয়ে ওঠেনা।প্রায় দেখা যায় পাশের বাজার হতে কম দামের কলা নিয়ে বানরকে দেয়।নাদুস নুদুস সরদারের বাচ্ছাটা ওর খুব পছন্দ ওকে প্রতিদিন কলা খাওয়াই।কলা হাতে বল্টুকে দেখলেই ও লাফ দিয়ে চলে আসে একে বারে কোলে উঠে কলা খায়।ওর মা ভারী চালাক সাথে সাথে পিছনের দিকে যায়,যাতে ধরে নিয়ে না যেতে পারে।এই ভাবে বেশ কিছুদিন আদর করে খাওয়াতে খাওয়াতে বানর বাচ্ছাটা বল্টুর ভক্ত হয়ে গেল।বানরের মা এবং সরদার বিষয়টি হইত আঁচ করতে পেরেছিল,পরদিন সকালে বল্টু কলা নিয়ে আসলে পরে বানর ছানাটি দৌড়ে ওর দিকে আসতেই মা বানরটি ওর পা চিপে ধরলো আর সরদার এসে ঘাড় ধরে একটা থাপ্পড় দিলো।বানর ছানাটি দূর হতে শুধু তাঁকাতেই লাগলো যতই ডাকে ওর মায়ের দিকে একবার নজর সরদারের দিকে একবার নজর।সরদার বানরটি মাথা উচু নীচু করে এক দৌড় দিয়ে বল্টুর হাত হতে কলাগুলো কেড়ে নিল।বল্টু নাছোড় বান্দা যা করেই হোক বানর ছানা নিতেই হবে,বানর ছানাটিও বল্টুর নিকট আসতে চাই কিন্ত ও তো জানেনা আমাকে আমার জাত ছেড়ে চীর দিনের জন্য মনুষ্য তাবেদারী গ্রহন করতে হবে। বল্টু ভাবলো সরদার বানর টির সামনে এখন ধরা যাবেনা।কয়দিন বল্টু আর আসল না,বুড়া বানরের মন অন্যদিকে ঝোক বুঝে বল্টু একদিন কিছু কলা আর একটা ছালার বস্তা নিয়ে বানর ছানা ধরার অপেক্ষায়।বল্টুর হাতে কলা দেখে বানর ছানাটি দৌড়ে ওর কাছে হাজির,বল্টু ওকে দুটো কলা দিয়ে বাকী গুলো বুড়ো বানরের দিকে ফিকে মারলো,বুড়া বানর কলা খাওয়াই ব্যস্ত এই ফাকে বল্টু বানর ছানাটাকে বস্তায় ভরে রুমের ভিতর দৌড়।ওরাও টের পেয়ে সবাই দরজায় হাজির।চারি দিকে ছুটাছুটি বানরের অস্বাভাবিক উপদ্রুপ কেউ বুঝতে পারছেনা ঘটনা কি? বল্টু বানর ছানা নিয়ে ওর ষ্টোরের মধ্যে লুকিয়ে রাখছে।মা বানরটি পাগল প্রায় দিশিবিশি না পেয়ে সামনে যা পাচ্ছে তাই নিয়ে আক্রমন করছে।কেউ জানেনা যে এ রকম ঘটনা ঘটেছে।বল্টু মিয়া বানরের বাচ্ছা বস্তায় নিয়ে দৌড় যে দিয়েছিল এটা আবার কুক টেনু মিয়া দেখে ফেলে ছিলো।টেনু মিয়া সারাদিন থাকে রন্ধন শালায় বানরে এতকিছু করছে ওর কোন খবর নেই।সারাদিন রান্নাবান্না শেষ করে রুমে এসে দেখে ওর বিছনাপাতির বারোটা বাজিয়েছে বানরে।তখন ও বানরের উপদ্রপের কথা জানতে পারলো।টেনু মিয়া তখন সবাইকে বললো যে বল্টু মিয়া বানরের বাচ্ছা ধরে বস্তায় করে নিয়েছিল আমি দেখছি আর এ জন্যই বানরেরা এ রকম করছে।দিন একটি পার হয়ে গেছে পরের দিন সমস্ত বানর এক হয়ে কমান্ডারের অফিস ঘেরাও গাড়ির চারিদিকে ঘেরাও কোথা থেকে এত বানর এসছে জানিনা,বহু বানর।সবাই হুংকার দিচ্ছে মনে হচ্ছে মনুষ্য জাতির সহিত ওরা যুদ্ধ ঘোষনা করেছে।কয়োকটা বড় বানর কমান্ডারের অফিসের দরজার পাশে তম্বিগম্বি করছে।কেউ বের হতে সাহস পাচ্ছেনা।বিষয়টি কমান্ডারকে জানানো হলো।বুড়া সুবেদার সাহেব বললো স্যার ওদের বাচ্ছা ফেরৎ দিতে হবে আর ওদেরকে খুশি করতে হবে নইতো ওরা ক্ষতি করবে।এই ফাকে মা বানরটি কেমনে জানি কমান্ডারের অফিসে ঢুকে পড়ে কমান্ডারের টেবিলের সামনে,অঝোরে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে,ও যেন বলতে চাচ্ছে কমান্ডার আমি আমার বাচ্ছার জন্য পাগল হয়ে গেছি।কমান্ডার সুবেদার সাহেবকে বললো,পাঁচ ঝুড়ি কলা আর বানর ছানাটির গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসেন।অবশেষে তাই করা হলো।বানরেরা এখন খুব খুশি।বাচ্ছাটি পাবার সাথে সাথে মা বানরটি বাচ্ছাটিকে নিয়ে একটা দৌড় দিল জংগলের দিকে।বাচ্ছা হারিয়েছে একজনের পাগল হয়ে গেছে সবাই,কি একতা ওদের মধ্যে বাচ্ছা আদায় করেই ছেড়েছে ওরা।আমরা মানুষ অন্যের ব্যথায় এখনো ব্যথিত হতে পারিনি।সমাজে একজনের প্রতি জুলুম হলে আমরা কেউ এগিয়ে আসিনা আসলে কি আমরা বানর পরিবার হতে অধপতনে?
আপনার মতামত দিন