ভজা প্রস্তাব নিয়ে ঠান্ডু,ফুলকীদের বাড়ী গেল।কিন্ত ফুলকী ঠান্ডু কেউ বাড়ীতে নেই।পাশের বাড়ীর একজনের নিকট জিজ্ঞাসা করে জানা গেল,ওরা এখন কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর কাজ করে।সারাদিন রাস্তায় মাটি কেটে যা গম পাই তাই দিয়েই চলে যাচ্ছে ফুলকী ঠান্ডুর সংসার।ভজা পাশের বাড়ীর লোকের কাছে বলে আসলো সে সন্ধাবেলা ওদের সাথে সাক্ষাৎ করবে।রাস্তায় মাটি কাটতে গিয়ে ঠান্ডুর একটু পা কেটে গেছে। আজ একটু সকাল সকাল চলে এসছে।সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম সন্ধা আসলেই শরীর একেবারে নেতিয়ে পড়ে।ঠান্ডুর চোখে ঘুম ঘুম ভাব খেজুরের পাটির উপর শুয়ে আছে।ফুলকী রাতের রান্না করছে।বিকালবেলা কাজ থেকে আসতেই নিকিরেদের কাছে কাছ থেকে একপোয়া পুটিমাছ নিয়েছে ও গুলো কুটে বেছে রান্না করছে। এরই মাঝে ভজা হাজির,ভজাকে দেখে ফুলকী আনন্দে আত্ম হারা। অরন্যে গোয়েন্দাবাস-১২ শহর থেকে যাবার পর আর দেখা হয়নি।পুরাতন পরিচিত মানুষের সাথে সাক্ষাৎ হলে এমনিতেই ভালো লাগে।ফুলকী ঠান্ডুকে ডেকে দিল এই দেখ কে এসছে,আমাদের ভজা ভাই।রাতে যা হলো তাই দিয়েই মেহমানদারী হলো।ভজা অবশ্য বেশি সময় থাকতে চাইনি কিন্ত ওরা রাতের খাবার না খেয়ে আসতে দিবেনা।আসলে বাংগালী গরীবদের আদর্শই এটা,বাড়ীতে যেই আসুক খালী মুখে ফেরৎ দেইনা।ডিজিটাল দুনিয়া আসার পর অবশ্য এগুলো এখন কম বাড়ীতেই করা হয়।খাবার শেষে ভজা বললো,ঠান্ডু ভাই আমি তোমাদের জন্য একটা প্রস্তাব নিয়ে এসছি।তুমি আমার সাথে ঝাড়ুদারের কাজ করবা আর ফুলকী ধোপার কাজ করবে।ঠান্ডু একটু দম ধরে বললো তা কোথায়? ঐ যে বুড়ার বন বাড়ীতে ওটা এখন সরকারী হয়ে গেছে। ফুলকী পাশেই ছিল ও বলে উঠলো ও ভজা ভাই আমরাতো আসতে চাইনি কিন্তু ঐ পাংখুয়া ব্যাটার কুত্তা খাওয়ার ডরে না আমরা যায়নি।ভজা বললো আরে তার কুত্তা খাওয়াই আমাদের কি আসে যায়? অবশেষে ঠান্ডু বিষয়টা ভজার উপর ছেড়ে দিল।ভজা পরের দিন বৃদ্ধর কাছে হাজির।বৃদ্ধকে বিস্তারিত জানিয়ে দিল যে, তারা চাকুরী করবে। বনবাড়ীতে আবার নুতন করে চাকুরী শুরু হলো।চাকুরীর ধরন ও ভিন্ন খাবার দাবারের মান ও ভালো তবে এখানে এখন নিয়োম কানুনের অভাব নেই।খুব সাবধানে চলা লাগে। পায়ে পায়ে সরকারী লোকেদের খালী নিষেধাজ্ঞা, এটা করা যাবেনা ওটা করা যাবেনা,এই সময় করা যাবেনা আসা যাবেনা ইত্যাদী।ভিতরে বড় বড় তিনটি একতলা বিল্ডিং প্রত্যেক বিল্ডিংয়ে ত্রিশ জন করে বাচ্চা আর তিনটি করে সেকশন। ওদের শিক্ষা দিক্ষা দেবার জন্য তিন জন মহিলা দুইজন পুরুষ সব সময় নিয়োজিত থাকে। জানা গেছে এরা দেশের সর্বোচ্চ মেধাধারী ব্যক্তি।এরা বিভিন্ন দেশে গোয়েন্দা প্রশিক্ষন নিয়েছে এবং গোয়েন্দা প্রশিক্ষনে যারা স্কলার হয়েছে একমাত্র তারাই এখানে নিয়োজিত হয়েছে।বাচ্চাদের দেখা শুনার জন্য প্রত্যেকটা সেকশনে দুইজন করে মাতৃ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মহিলা নিয়োজিত আছে যারা সব সময় বাচ্চাদের আদর যত্ন করতে থাকে। জীবন বড়ই কঠিন, কখনো কখনো সহজ মনে হলেও পরক্ষনেই যেন আঁধার এসে ঝাপটে ধরে। মনে হয় জীবনের আর নিস্তার নেই।আবার কোন সে অলক্ষে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে আসে।বিপদের সময় যেটাকে বড় বড় ক্ষমতাধর তদবির দ্বারা স্বাভাবিক করতে হিমসিম খেতে হয়, আল্লাহ সময় দ্বারা সেটাকে স্বাভাবিক করে দেন।ভজার উপর যে বিপদকাল নেমে এসছিল তা স্বাভাবিক ছিলনা,আবার এত সহজে ভজা, ফুলকী ঠান্ডু চাকরি পেয়ে যাবে এটাও সহজ ব্যাপার না।তবে বিধাতা যদি চান কোন একটা অসিলার মাধ্যম দিয়ে জটিলকে সহজ করে দেন।যাক আমাদের গল্পের ভিতর কথা না বাড়িয়ে আমরা মূল ঘটনার দিকে যায়।বাচ্চাদেরকে কেন এভাবে গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে? এর সুফল বা লাভ কি? একটি দেশের জন্য এটি কি সুফল বয়ে আনবে? হ্যাঁ এটা ৪০ বছর অগ্রিম চিন্তা ভাবনা যা আরো দুই শত বছর দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।বিশ্বেরর উন্নয়ন শীল রাষ্ট্র গুলো এখন সর্বনিম্ন ৫০০ বছর অগ্রিম পরিকল্পনা করে।এরই ধারা বকহিকতায় এগিয়ে যাচ্ছে বৃদ্ধের কার্যক্রম। এখানে বাচ্চাদের এখন মানুষিক বিকাশের প্রশিক্ষণ চলছে।প্রশিক্ষক গন আসলেও অনেক আন্তরিক।তাদের যোগ্যতা মোতাবেক সম্মানী এমন এটা বেশি না।সাধারণ স্কুল কলেজের শিক্ষকদের শিক্ষকতার পাশাপাশি যেমন টিউশন,কোচিং ইত্যাদির মাধ্যমে টাকা ইনকামের যে ধান্দা এটা এদের মধ্যে নেই। মানুষিক বিকাশের পাশা পাশী তাদের দেশের প্রতি ভালবাসা,মমত্ববোধের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।তবে এই সমস্ত বাচ্ছাদের কাউকেই গোয়েন্দা তৈরী করা হবেনা এরা হবে গোয়েন্দাদের পিতা মাতা।এদেরকে মেধার ভিত্তিতে বিভিন্ন সেক্টরে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।এদেরকে অনুপ্রবেশ করানো হবে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সেক্টরে।পরে এরা ঐ দেশের নাগরিক যাতে হতে পারে তার সব ব্যবস্থা করা হবে।আর এভাবেই এদের প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা হবে।
আপনার মতামত দিন