bpsc৩৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার পর আগামী ২৬ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে মৌখিক পরীক্ষা। এতে উত্তীর্ণ হলেই স্বপ্নের চাকরি। এবার লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ৯ হাজার ৮২২ জন। ২ হাজার ৫২টি পদে নিয়োগের জন্য ২০১৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ৩৪তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে পিএসসি।

মৌখিক পরীক্ষার বাধাটা জয় করে স্বপ্নকে হাতের নাগালে পেতে আপনাকে সবার আগে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। পিএসসির সাবেক সদস্য মো. মহাব্বত খান বলেন, বিসিএস মৌখিক পরীক্ষা হলো একটি দীর্ঘ প্রস্তুতির অংশ। শুধু মুখস্থবিদ্যার ওপর নির্ভরশীল পরীক্ষার্থীদের জন্য এই পরীক্ষায় ভালো করা কঠিন। কারণ এখানে কী ধরনের প্রশ্ন আসবে, আগে থেকে বলার উপায় নেই। নানা বিষয়ে প্রশ্ন হতে পারে। মৌখিক পরীক্ষায় প্রার্থীর আচরণের নানা দিক দেখা হয়। কারণ, এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীকেই আগামী দিনে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব দেওয়া হবে। এই পরীক্ষায় নিজেকে সার্বিকভাবে প্রকাশ করতে হয়। পোশাক থেকে শুরু করে কথাবার্তা ও আদব-কায়দায় নিজের যোগ্যতা ফুটিয়ে তুলতে হবে। কীভাবে প্রার্থী প্রশ্নকর্তাদের সামনে হাজির হচ্ছেন, কক্ষে প্রবেশ করছেন বা কক্ষ থেকে বের হচ্ছেন তা দেখা হয়। কেউ পররাষ্ট্র ক্যাডারের জন্য আবেদন করলে তাঁর ইংরেজিতে দক্ষতা যাচাই করা হয়। যদি তিনি অশুদ্ধ ইংরেজি বলেন বা বারবার আটকে যান, প্রশ্নকর্তারা বিরক্ত হতে পারেন। যাঁরা বিভিন্ন ক্যাডারের জন্য আবেদন করেছেন, তাঁদের সেসব ক্যাডারের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। সাধারণত প্রার্থীর প্রথম পছন্দের ক্যাডারের কাজের পরিধি ও দায়িত্ব-কর্তব্য নিয়ে বেশি প্রশ্ন করা হয়। ওই ক্যাডারের কাজের পরিসীমা বা দয়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে প্রশ্ন হতে পারে।

আবার প্রার্থী যে বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পড়েছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন করা হতে পারে। ২৭তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. রেজাউল করিম বলেন, মৌখিক পরীক্ষায় যথাযথ আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ ঘটাতে হবে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিষয়ে খুঁটিনাটি বা বিশদ ধারণা থাকতে হবে। অনেক সময় প্রশ্নকর্তারা প্রার্থীর চাপ সামলানোর ক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য নিজেরাই নানা পরিস্থিতি তৈরি করেন। সেই অবস্থায় প্রার্থীকে নিজের বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে উতরে যেতে হবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিকমতো সঙ্গে নিয়ে যাবেন। চলতি ঘটনাবলি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার ওপর পরীক্ষায় প্রশ্ন হতে পারে। অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি ও প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। মৌখিক পরীক্ষায় কখনো কখনো এলোপাতাড়ি প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন ছুড়ে প্রার্থীকে বিচলিত করার চেষ্টা করা হয়। তাই সেই সময়ে আপনাকে হতে হবে বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন ও আত্মবিশ্বাসী। ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে ইংরেজিতেই উত্তর দিতে হবে।

পরিপাটি পোশাক পরে মৌখিক পরীক্ষায় হাজির হতে হবে। হাফহাতা শার্ট এড়িয়ে চলুন। মেয়েদের পোশাকও পরিপাটি ও রুচিশীল হওয়া উচিত। চুল গোছানো থাকা আবশ্যক। স্বাভাবিক ও হাসিমুখে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ভালো।৩১তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারে নারায়ণগঞ্জে কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান বলেন, মৌখিক পরীক্ষায় চলমান আলোচিত বিষয়ে প্রশ্ন হতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, আয়তন, জনসংখ্যা, শিক্ষার হার এবং প্রার্থীর নিজস্ব অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যেতে পারে। প্রার্থীর নিজ জেলার আয়তন, জনসংখ্যা, শিক্ষার হার, সেটি কী জন্য বিখ্যাত, থানার সংখ্যা, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক, সমাজসেবক ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা থাকা ভালো। সাক্ষাৎকার বোর্ডে আসার আগে বোর্ডের সাধারণ নিয়মকানুন সম্পর্কে জানতে হবে। বোর্ডের সবাইকে ভালোভাবে দেখে সম্পূর্ণ ভয়হীন মনে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। যে প্রশ্নই করা হোক না কেন, সেটা ভালো করে বুঝেশুনে উত্তর দিতে হবে। যেসব প্রশ্নের সঙ্গে পরিচিত নন, সেগুলো কৌশলে এড়িয়ে যেতে হবে। কোনো ধরনের তদবির ও মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যাবে না। তাতে স্বপ্নের খুব কাছাকাছি এসেও ছিটকে পড়তে পারেন।


আপনার মতামত দিন