ইন্টারভিউয়ে ১৪টি কৌশলী প্রশ্নইন্টারভিউয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি করা হয় বেশ কৌশল খাটিয়ে। সাধারণত এসব প্রশ্নের মাধ্যমে প্রার্থীর কাছে থেকে সেই সব তথ্য বের করার চেষ্টা করা হয় যা তারা লুকানোর চেষ্টা করছেন। হঠাৎ করেই এসব প্রশ্ন করে প্রার্থীকে বেকায়দায় ফেলে দিতে চান প্রশ্নকর্তারা, বললেন 'রিজ্যুমি রাইটারস ইনক' এর প্রতিষ্ঠাতা এবং এক্সিকিউটিভ ক্যারিয়ার কোচ টিনা নিকোলাই।তবে এসব প্রশ্নের বেশ বাজে দিকও রয়েছে বলে জানান টিনা। তিনি বলেন, অনেক সময়ই এসব প্রশ্নের জবাব হয়তো স্মার্টভাবে দিতে পারেন না প্রার্থীরা। ফলে সত্যিকার কাজের মানুষ হারানোর ভয় থাকে তাতে। এখানে জেনে নিন এমন ১৪টি কৌশলী প্রশ্ন।

Interview

১. একটি শব্দে আপনি নিজেকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

এ প্রশ্নের মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিত্ব এবং তার ধরণ সম্পর্কে ধারণ নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তা ছাড়া নিজের সম্পর্কে আপনার ধারণা কী তাও বের হয়ে আসে। এ প্রশ্নটির জবাব দেওয়া খুবই চ্যালেঞ্জিং। কারণ আপনি জানেন না এই চাকরিতে কী ধরনের ব্যক্তিত্বের প্রার্থী খোঁজা হচ্ছে। তা ছাড়া নিজের ব্যক্তিত্বের পুরোটা একটিমাত্র শব্দে বর্ণনা করাটাও অনেক কঠিন। তাই এ প্রশ্নের জবাব দিতে হবে বেশ সাবধাণতার সঙ্গে, জানালেন ওয়ার্কপ্লেস এক্সপার্ট লিন টেইলর। চাকরির ধরণের ওপর ভিত্তি করে শব্দ নির্বাচন করতে হবে। অ্যাকাউনটেন্ট পদে চাকরির জন্য নিশ্চয়ই 'ক্রিয়েটিভ' বা 'সৃষ্টিশীল' শব্দটি ব্যবহার করবেন না। বর্তমানে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এমন প্রার্থী খোঁজেন যারা দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারে এবং সততা, বিশ্বাযোগ্যতা এবং ত্যাগী মনোভাব সম্পন্ন হন।

২. যে পদের জন্য আবেদন করেছেন তাকে অন্যগুলোর সঙ্গে কীভাবে তুলনা করবেন?

এ প্রশ্ন দিয়ে তারা আসলে জিজ্ঞাসা করছেন, আপনি কি অন্য কোনো চাকরির জন্য আবেদন করেছেন? এর মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করা হয় আপনি চাকরি খুঁজতে কতোটা মনযোগ দিয়েছেন। যখন কথা বেরোতে থাকবে, তখন বোঝা যাবে অন্যান্য কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার আগ্রহ রয়েছে আপনার। যদি বলেন যে শুধু এই চাকরিতেই আবেদন করেছেন তবে বড় ভুল করবেন। ধরে নেওয়া হবে আপনি মিথ্যা বলছেন। যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন তার সম্পর্কে ইতিবাচক কথা বললে কর্তৃপক্ষ মনে করবে, শেষ পর্যন্ত হয়তো আপনি অন্য কোথাও সুযোগ পেয়ে ঢুকে যাবেন। অন্যদের সম্পর্কেও নেতিবাচক কথা বলা উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো জবাবটি এমন হতে পারে যে, বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আপনি আবেদন করেছেন। তবে এখনো ঠিক করেনটি কোন পথে এগোবেন।

৩. আপনার তিনটি গুণ ও দুর্বলতার কথা কি বলতে পারেন?

এর জবাবে কর্তৃপক্ষ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করবেন যে আপনার মাঝে দলবদ্ধ হয়ে কাজ করার যোগ্যতা রয়েছে কিনা। আবার দুর্বলতার মাঝেও সম্ভাবনা থাকার প্রয়োজন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুর্বলতা প্রকাশের বিষয়টি খুবই টেনশনের বিষয়। কারণ এমন দুর্বলতা না প্রকাশ পায় যা চাকরির জন্য আপনাকে অযোগ্য করে তোলে। তাই ভালো হয় যদি আগে থেকে এমন প্রশ্নের জবাব ঠিক করে নিয়ে চ্যালেঞ্জটাকে নিয়ে নেওয়া। এ প্রশ্নের মাধ্যমে চাকরিদাতারা জানতে চান যে, আপনি কাজের জন্য ঠিক আছেন এবং আপনার দুর্বলতাগুলোও ভবিষ্যতে যোগ্যতা হ্রাস করবে না।

৪. আপনি কেনো এখানে কাজ করতে চান?

এর মাধ্যমে জানতে চাওয়া হয় আপনার সবচেয়ে আগ্রহের বিষয়টি। এ ছাড়া এই চাকরি কতোটা প্রয়োজন তাও বুঝতে চান তারা। নিঃসন্দেহে এখানে কাজ করার কয়েকটি কারণ রয়েছে আপনার। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, এর গুরুত্বের ধারাবাহিকতা। এতে বোঝা যায় আপনার কাছে কোন বিষয়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে চাকরিদাতারা বুঝতে চান আপনি তাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কতটুকু জেনেছেন এবং বুঝেছেন। আরো বুঝতে চান, আপনি কি আসলে এই চাকরিই চান নাকি যেকোনো একটি হলেই চলবে।

৫. বর্তমান চাকরিটি কেনো ছেড়ে দিতে চান?

এর মাধ্যমে আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক দিকগুলো জানতে চাইবেন তারা। অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত থাকলে তারা জানতে চাইবেন সেখানে কোনো সমস্যায় রয়েছেন কিনা অথবা চাকরিচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা। কেউ বলতে চান না কেনো তিনি বর্তমান চাকরিটি ছেড়ে দিতে চাইছেন। আবার অপছন্দনীয় চাকরির বিষয়েও কেউ বলতে চান না। যদি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে জবাব না দিতে পারেন, তবে চাকরির আশা বাদ দিতে হতে পারে আপনার। এ প্রশ্নের জবাবে তারা আশা করবেন যে আপনি আসলে আরো চ্যালেঞ্জিং চাকরি খুঁজছেন। আপনার যে যোগ্যতা রয়েছে তার জন্য আরো ব্যাপক ক্ষেত্র ও সুযোগ দরকার- তেমনটাই দেখবে চান তারা।

৬. ক্যারিয়ারের কোন বিষয়টি নিয়ে গর্বে করবেন আপনি?

এর মাধ্যমে জানতে চাওয়া হবে আপনি কোন বিষয়ের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন এবং কোন বিষয়ে আরো এগিয়ে যেতে চান। নিজের সফলতা পর গর্বিত বোধ করেন কিনা তাও বোঝার চেষ্টা করবেন তারা। ভবিষ্যতে কোন ধরনের কাজ করতে আপনি বেশি আগ্রহ বোধ করবেন তা জানানো কঠিন। তাই নির্দিষ্ট কোনো বিষয় উপস্থাপন করা ঠিক নয়। এমন কিছু বলতে হবে যাতে বহুবিধ কাজের সমন্বয় থাকে। জবাবের মাধ্যমে আপনার ইতিবাচক মনোভাব দেখতে চাইবেন তারা। এর মাধ্যমে উদ্যমশীলতা ফুটে উঠতে হবে। তারা দেখতে চাইবেন সফলতা অর্জনের প্রতি আপনার তীব্র আকাঙ্ক্ষা রয়েছে কিনা।

৭. কোন ধরনের সহকর্মী এবং বসদের সঙ্গে কাজ করে সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন সফল হয়েছেন, কেনো?

এর মাধ্যমে তারা বুঝতে চাইবেন অন্যের সঙ্গে আপনার দ্বন্দ্ব রয়েছে কিনা এবং তা কী ধরনের। দ্বিতীয়ত তারা বোঝার চেষ্টা করেন, আপনি সর্বোচ্চ সফলতার জন্য কীভাবে কাজ করেন। অন্যের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে অসফল হওয়ার বিষয়ি বর্ণনা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়বেন আপনি। আবার বসদের সমস্যা বর্ণনা করতে গিয়ে যদি এমন কিছু বলেন যা ইন্টারভিউয়ে উপস্থিত কোনো বসের বদ অভ্যাসের কথা তুলে ধরে, তবে তা একটা ঝামেলা। এ প্রশ্নের জবাবে প্রশ্নকর্তারা খারাপের চেয়ে ভালো কথাই বেশি আশা করেন। তবে সবচেয়ে ভালো ইতিবাচক দিকগুলো শুরু করে ধীরে ধীরে নেতিবাচক দিকে যাওয়া। বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা যে আপনার রয়েছে এবং তা আপনি খুব ভালো মতোই পারেন, তাই বোঝাতে হবে জবাবে।

৮. একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে চিন্তা করেছিলেন?

এর মাধ্যমে তারা বুঝতে চাইবেন, নিজের একটি ব্যবসা সৃষ্টির গোপন ইচ্ছা আপনার রয়েছে কিনা। কারণ এমন মানুষকে তারা চাকরি দিতে চান না। প্রত্যেক মানুষই তার কর্মজীবনের শুরুতে নিজের ব্যবসা স্থাপনের চেষ্টা করেন বা স্বপ্ন দেখেন অন্তত। তাই সরাসরি নাকচ করে দেওয়াটা উচিত হবে না। আবার কোনো এক সময় আপনার একটি ব্যবসা ছিলো বা ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে তা প্রকাশ করাটাও ঝুঁকিপূর্ণ। একজন স্বাধীন ব্যবসায়ী হওয়ার ইচ্ছা ছিলো আপনার তা প্রকাশ করা সমস্যা নয়। আবার এ ধরনের ইচ্ছা থাকলেও তা নিয়ে আপনার কোনো পরিকল্পনা নেই- বিষয়টিকে এভাবেই উপস্থাপন করা ভালো। এর জবাবে কর্পোরেট দুনিয়ায় কাজ করে আপনি কতোটা আনন্দ পান তাই শুনতে চান কর্তৃপক্ষ।

৯. যেকোনো একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ পেলে আপনি কোথায় চাকরি করতেন?

এর মাধ্যমে তারা জানতে চাইবেন বিশেষ কোনো কাজে এবং প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে আপনি কেমন কর্মী। পাশাপাশি কাজের প্রতি আপনার দায়বদ্ধতাও প্রকাশ পাবে এতে। এর জবাবে আপনি বেশি কথা বলতে গেলে এক সময় ধরা খেয়ে যাবেন। আপনার কথায় কিছু ভালো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বাজে মন্তব্য চলে আসতে পারে। তাই নিজের সামান্য কিছু ধ্যান-ধারণা উপস্থাপন করুন।

১০. আগামীকাল কোটি টাকা হাতে পেয়ে গেলে আপনি কী করবেন?

এর একটিই অর্থ, তারা জানতে চান টাকা পেলে আপনি কি কাজ করতে চান কিনা চান না। এর জবাবে একজন কর্মী হিসেবে আপনার মতাদর্শ এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা যায়। এটা অনেকটা অ্যাম্বুশের মতো। যদি বড় বড় অনকে কিছু করার তালিকা তুলে ধরেন তাহলে এই চাকরিটি আপনার প্রয়োজন নেই যদি অর্থ পেয়ে যান। তাই সাধারণ কিছু জবাব দিয়ে চুপ করে থাকাই ভালো। তারা বুঝতে চান যে, এই কাজ বিষয়ে আপনি আগ্রহী এবং ভবিষ্যতে অর্থশালী হলেও এই কাজের প্রতি আগ্রহ কাজ করবে আপনার।

১১. আপনার বস বা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দ্বারা কী কখনো সততা বিসর্জনের প্রস্তাব পেয়েছেন?

এর মাধ্যমে আপনার নৈতিকতার কম্পাসটি সম্পর্কে ধারণা চান সবাই। বিশেষ কোনো মুহূর্তে আপনার সততা কীভাবে ধরে রাখবেন তাও বুঝতে চাইবেন তারা। আপনার বিচক্ষণতার গভীরতাও দেখার চেষ্টা করা হবে। স্পর্শকাতর বিষয়গুলো আপনি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন তার জবাব বেরিয়ে আসবে। সেইসঙ্গে সাবেক অসৎ কোনো কর্মীর কথাও জানান দিয়ে ফেলতে পারেন। তাই এ ক্ষেত্রে একজন কূটনীতিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের বাজে ইতিহাস না তুলে ধরে নিজের মতাদর্শকে স্পষ্ট করে তুলুন। এটাই দেখতে চাইবেন তারা। তা ছাড়া কোনো নাম বা প্রতিষ্ঠানকে উল্লেখ না করে এমন একটি ঘটনাকে গল্পের মতো করে আওড়ে যেতে পারেন।

১২. আপনার সঙ্গে কাজ না করতে চাওয়ার একটি কারণ বলতে পারেন?

এখানে ব্যক্তিত্বের একটি খারাপ দিক সম্পর্কে জানতে চাইবেন তারা। আর যদি মিথ্যা বলেন, তবে তা প্রমাণ হবে ভবিষ্যতে। যদি সরাসরি বলেন যে এমন কোনো কারণ নেই, তবে প্রশ্নকর্তাকে অপমান করা হলো এমন প্রশ্ন করার জন্য। তাই নিজের সমস্যাকে সরাসরি না বলে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে উত্থাপন করুন। জবাব এমন হতে পারে, আসলে সব সময় যে আমার সঙ্গে কাজ করতে সবার ভালো লাগবে তা নয়। বিশেষ করে কাজের যখন সময় বেঁধে দেওয়া থাকে তখন....।

১৩. এতোদিন কাজ থেকে দূরে ছিলেন কেনো?

অনেক সময়ই নিজেকে নির্দোষ না প্রমাণ করা পর্যন্ত আপনাকে দোষী বলেই ধরা হবে। এই প্রশ্নের মাধ্যমে বুঝতে চাওয়া হবে, আপনি নিজের বিষয়ে যথেষ্ট দায়িত্বশীল কিনা। পেশাজীবনে আপনার স্থিতিস্থাপকতা সম্পর্কে বলতে হবে এর জবাবে। প্রতিষ্ঠান দেখতে চাইবে বেকার অবস্থাতেও আপনি কোনো না কোনো কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা করবেন। অন্তত একটি চাকরি খুঁজতেই যে আপনি ব্যস্ত ছিলেন তা বোঝাতে হবে তাদের।

১৪. এই ইন্টারভিউয়ের জন্য কীভাবে সময় পেলেন?

যদি অন্য কোনো চাকরিতে বর্তামান থাকেন তবে তারা জানতে চাইবেন অফিসকে কী বলে আপনি এখানে এসেছেন। এ ক্ষেত্রে আপনার সততার উদাহরণ দেখতে চাইবেন তারা। বর্তমান বসকে ফাঁকি দিয়ে এখানে এসেছেন বলাটাও ঝামেলা। আবার সরাসরি একটি মিথ্যা বলাটাও অস্বস্তিকর। এ ক্ষেত্রে তারা দেখতে চাইবেন, আপনি বর্তমান চাকরিকে অবশ্যই আগে প্রাধান্য দিচ্ছেন। অথবা নিজের যোগ্যতার প্রদর্শনে আরো বড় ক্ষেত্র চাইছেন।


আপনার মতামত দিন