Robindranat

রাজনীতিতে যেমন শেষ কথা বলে কিছু নেই তেমনি বিখ্যাত কবিদেরও শেষ দল, শেষ প্রেম বলে কিছু নেই। রাজনীতি ও প্রেম এই দুই ক্ষেত্রে তারা কোথাও কোন আপস করেন না, কোথাও আটকা পরেন না।
যেমন ধরুন রবীন্দ্রনাথ, হুমু এরশাদ, নজরুল সবাই রাজনীতিতে সকাল বিকাল ধানে-নৌকায় গড়াগড়ি খেয়েছেন প্রেমের কথা নাই বা বললাম। অপরজন তো এ যুগের লিজেন্ড।
টুকটাক ব্যাতিক্রম অবশ্য পাওয়া গেছে তবে ভাল করে তাদের প্রোফাইল ঘাটলে হয়ত দেখা যাবে তারাও এসব ক্ষেত্রে ডিগবাজি কম দেন নি।
আসছে জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে আজেকে আলোচনা করব রাজনীতি নিয়ে। তো চলুন দেখে নেয়া যাক বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত কছু কবি-সাহিত্যিক যারা আজ বেঁচে থাকলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে নৌকায় আর কে ধানে শীষে ভোট দিতেন-


বিএনপি ভক্ত সুকান্ত সম্ভবত তারুন্যের প্রতিক তারেক রহমানের বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছিলেন-


“হয় ধান নয় প্রাণ” এ শব্দে
সারা দেশ দিশাহারা,
একবার মরে ভুলে গেছে আজ
মৃত্যুর ভয় তারা।

 

তিনি দেখি এক্কেবারে মারমুখী ভূমিকায় আছেন। জালাও-পোড়াও রাজনীতিতে বিশ্বাসী। এমন কবিদের জন্যেই দেশের রাজনীতির দূর্নাম হয়। তার বিরুদ্ধে মরনোত্তর মামলার ব্যবস্থা করা উচিত।
সুকান্ত ভট্টাচার্য: জন্ম‎: ‎১৫ আগস্ট ১৯২৬, মৃত্যু‎: ‎১৩ মে ১৯৪৭।


রবীন্দ্রনাথ খুব সম্ভবত এরশাদ ভক্ত ছিলেন- স্মরন শক্তি না থাকলে যা হয় আরকি।
তাই এক কবিতাতেই সেকেন্ড সেকেন্ড ধান-নৌকায় ডিগবাজি খেলেছেন-


“ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই-- ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
...................
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।”


তাহার কাছে ধানও সোনার ধান, আবার নৌকাও সোনার তরী, পুরাই সুবিধাবাদী।
তিনি জঙ্গী হামলায় মরলে দুই দলই তাকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করত।
জন্ম: ৭ই মে ১৮৬১, মৃত্যু: ৭ই আগস্ট ১৯৪১।


নজরুল সম্ভবত কয়েকবার দল বদল করেছেন-


“খোকা ঘুমাল পাড়া জুড়াল
বর্গি এল দেশে,
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কিসে?”

 

আবার অন্য জায়গায় নৌকার পাপীদেরকে বলেছেন:
“নিঃশেষে নিশাচর গ্রাসে মহাবিশ্বে,
ত্রাসে কাঁপে তরণীর পাপী যত নিঃস্বে।

তমসাবৃতা ঘোরা ‘কিয়ামত’ রাত্রি,
খেয়া-পারে আশা নাই ডুবিল রে যাত্রী!”


অন্যদিকে নৌকার পূন্যবান যাত্রীদেরকে বলেছেন:
“আবুবকর উস্‌মান উমর আলি হায়দর
দাঁড়ি যে এ তরণীর, নাই ওরে নাই ডর!
কাণ্ডারী এ তরীর পাকা মাঝি মাল্লা,
দাঁড়ি-মুখে সারি-গান –লা-শরিক আল্লাহ!”


অভাবী নজরুল ধান খাওয়ার জন্যে বুলবুলিকে দোষারুপ করেছেন যেন তিনি শুধু ধানের উপর নির্ভরশীল অথচ চাইলেই নৌকা চালিয়ে ব্যাংক লোন নিয়ে খাজনা দিতে পারতেন। আবার নৌকার পাপী যাত্রীদের ডুবে মরবে বলেছেন আর পূন্যবান যাত্রীরা আল্লার নামে নির্ভয়ে এগিয়ে যাবে বলে নৌকারই জয়গান করেছেন।
জন্ম: ২৪ মে ১৮৯৯, মৃত্যু‎: ‎২৯ আগস্ট ১৯৭৬


ফররুখ আহমেদ ডিরেক্ট আওয়ামী লীগার ছিলেন-


“তুমি উঠে এসো, তুমি উঠে এসো মাঝি মাল্লার দলে
দেখবে তোমার কিশতি আবার ভেসেছে সাগর জলে”


ফররুখ সাহেব আবার নৌকার দূর্দিনে সবাইকে মাঝি মাল্লার দলে যোগ দিতে বলছেন।
জন্ম : জুন ১০, ১৯১৮, মৃত্যু : অক্টোবর ১৯, ১৯৭৪


কবি জসীস উদ্দীন তার মেয়ের জামাই মওদুদ কেই সাপোর্ট করেছেন-


“কচি ধানের তুলতে চারা হয়ত কোন চাষী,
মুখে তাহার জড়িয়ে গেছে কতকটা তার হাসি।”

 

“ভাটীয়াল সোঁতে পাল তুলে দিয়ে
আবার ভাসিবে মোর বাদিয়ার তরী

 

“বাদিয়ার বেশে কেন ভাসিলাম জলে,
কেন তরী মোর ডুবিয়া গেল না”

 

জসীম উদ্দীন যেমন ধানের সাথে কৃষকের হাসির মিল খুজে পেয়েছেন তেমনি নৌকাকে আবার বাদিয়ার নৌকা বলে সমালোচনা করেছেন। মেয়ের সুখ বলে কথা !!
জন্ম: জানুয়ারি ১, ১৯০৩, মৃত্যু: মার্চ ১৩, ১৯৭৬


জীবনানন্দ তো মরে গিয়েও ধানের মায়ায় বিভোর হয়ে আছেন-


“আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে— এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়— হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে”

তবে জীবনানন্দ দাশ ধানের শীষের ভোটার হয়ে বাংলায় ফিরতে চাইলেন না কেন বুঝলাম না। অবশ্য ভয় একটা আছে, মৃত মানুষদেরকেও আজকাল মামলার আসমী করা হচ্ছে। অন্যদিকে কোন বেশ-বুশ ছাড়াই মৃত মানুষজন চুপিচুপি ভোট দিয়ে যাচ্ছে ।

তাই তিনি শালিকের বেশে বাংলায় ফিরলেই কি আর কাওয়ার বেশে ফিরলেই বা কি। ভোট তো দিবেনই।
জন্ম: ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৯, মৃত্যু: ২২ অক্টোবর ১৯৫৪


অমিয় চক্রবর্তী ও বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে বললেন-


“যমুনা-পদ্মার তীরে তীরে
রূপোলি জলের ধারে, আম-জাম-নারকেল ঘেরা
আমন ধানের খেতে”


জন্ম: এপ্রিল ১০, ১৯০১, মৃত্যু: জুন ১২, ১৯৮৬


দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ও দেখি বিএনপি করতেন-


“ধন ধান্য পুষ্প ভরা,.
আমাদের এই বসুন্ধরা”

তিনি ধানকে বাংলা থেকে বিশ্ব পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।
জন্ম: ১৯ জুলাই ১৮৬৩ , মৃত্যু: ১৭ মে ১৯১৩


আর এরশাদ চাচা কবিতায় ইস্তফা দিয়েছেন নাকি বইয়ের আড়ালে ওনার কাব্য প্রতিভা বিকশিত হচ্ছে জানা নেই তবে এখনো ধান-নৌকা যেদিক থেকে ঝড় আসে সেদিকেই ছাতা ধরে মরে আছেন।

লেখক পরিচিতি
এম, এইচ, মিনহাজ
আমি বিভিন্ন বাংলা/ইংরেজী ব্লগের একজন অনিয়মিত এবং সখের ব্লগার। তবে নিয়মিত লেখার ইচ্ছে থাকলেও অনিয়মিত ভাবেই পাঠকদের বিরক্ত করে থাকি। আমার লেখার বিষয়বস্তু- যা মনে আসে তাই। কারও কাছ থেকে বাহবা পাওয়ার জন্য লিখি না। কেউ আমার লেখা পছন্দ করলে খুশি হই তবে অপছন্দ করলেও লেখালেখি বন্ধ করার কোন অবকাশ নেই, কারন আমি একান্ত সখের বশেই লেখালেখি করি।
আমার ব্লগ সমুহ:

মন্তব্যসমুহ  
MD Habibur Rahman
0 # MD Habibur Rahman 2019-04-14 23:45
Very nice and helpful post. I like this site.

স্কিটো সিম কি? what is skitto sim
প্রতিউত্তর
আপনার মতামত দিন