hole rashia

রাশিয়ার পেনিনসুলায় ইয়ামাল বা পৃথিবীর শেষ প্রান্ত হিসেবে খ্যাত এলাকায় রহস্যময় একটি গর্ত মানুষের মধ্যে নানা কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। কী আছে সেই গর্তের ভেতর? সম্প্রতি রাশিয়ার গবেষকেরা সেই রহস্যের সমাধান করেছেন। রহস্যময় এই গর্তটির ভেতরে কী আছে তা নিয়ে একটি ভিডিও ফুটেজও প্রকাশিত হয়েছে।

 

অনেকেই ধারণা করছিলেন গ্রহাণু বা মিসাইলের আঘাত কিংবা কোনো বিস্ফোরণে সৃষ্টি হয়েছে এই গর্তের। গবেষকেরা দাবি করেছেন, এই গর্তটি এলিয়েন, গ্রহাণু বা কোনো ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত বা কোনো গ্যাস বিস্ফোরণে সৃষ্টি হয়নি। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এই গর্ত সৃষ্টির জন্য দায়ী।

 

এর আগে হেলিকপ্টার থেকে এই গর্তটি পর্যবেক্ষণ করলেও এবার রাশিয়ার গবেষকেরা গর্তটির কাছে গিয়ে এর গভীরতা মাপার কাজটি করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, রহস্যময় এই গর্তটির গভীরতা খুব বেশি নয়। এটি সর্বোচ্চ ৩০০ ফুট বা ৭০ মিটার পর্যন্ত গভীর হতে পারে। এর নিচে বরফের লেক বা হ্রদ রয়েছে। এই বরফ হ্রদে গর্তের গা বেয়ে পানির ধারা বয়ে যাচ্ছে। সাইবেরিয়ান টাইমসে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, গর্তটি আগে যতখানি প্রশস্ত মনে করা হচ্ছিল আসলে ততটা নয়। এর আগে আকাশ থেকে তোলা ছবি দেখে তাঁরা ধারণা করছিলেন এই গর্তটি ৫০ থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত হতে পারে। এখন তাঁরা বলছেন, এটি সর্বোচ্চ ৩০ মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত হতে পারে।

hole 2

কীভাবে হলো এ গর্ত? ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’-এ এই রহস্যময় গর্ত নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তাতে ‘পিঙ্গো’ নামের একটি বিশেষ তত্ত্বের কথা বলা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের পোলার সায়েন্টিস্ট ডক্টর ক্রিস ফগউইলের মতে, এই গর্ত তৈরি হয়েছে পিঙ্গোর কারণে। পিঙ্গো হলো মেরু এবং এর কাছাকাছি অঞ্চলে পাওয়া এক ধরনের বরফের স্তূপ, যা মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকে। পিঙ্গোর আকৃতি বেশি বড় হলে এটা যদি গলে গিয়ে থাকে, তবে এই বিশাল গর্ত সৃষ্টি হওয়া সম্ভব।

 

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ববিদ ডেভিড উইলশের মতে, এটি রহস্যজনক একটি ঘটনা। মাটি নিচের দিকে ধসে গিয়ে তৈরি হওয়া এটা কোনো সাধারণ সিঙ্ক হোল নয়, আবার কোনো উল্কাপাতের ফলেও তৈরি নয়। উল্কার আঘাতে এত বড় গর্ত তৈরি হওয়ার ঘটনা ঘটলে তার প্রভাব হতো ভিন্ন। এ ছাড়া এত গভীর গর্ত হওয়ার প্রশ্নই উঠত না। গর্তের কিনার ঘিরে যে জঞ্জাল দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হয় মাটির নিচ থেকে কোনো ধরনের বিস্ফোরণে এটা তৈরি হয়েছে। অবশ্য এই অঞ্চলটি ভূকম্পনপ্রবণ এলাকা নয়। এটা পকেট আকারে সঞ্চিত প্রাকৃতিক গ্যাসের বিস্ফোরণে তৈরি হতে পারে।

 

রাশিয়ার সায়েন্টিফিক রিসার্চ সেন্টার অব দ্য আর্কটিকের জ্যেষ্ঠ গবেষক আন্দ্রেই প্লেখানভ জানিয়েছেন, এ সপ্তাহে গ্যাসসমৃদ্ধ এলাকাটিতে রহস্যজনকভাবে সৃষ্ট গর্তটির কারণ মাটির নিচে অতিরিক্ত চাপ বেড়ে যাওয়া। এই অঞ্চলের তাপমাত্রায় পরিবর্তন আসার ফলে এ ঘটনা ঘটেছে। হঠাত্ সৃষ্ট এই গর্তটি বৃত্তাকার নয়, বরং এটি ডিম্বাকৃতির। এই গর্তটির ৮০ শতাংশই বরফে তৈরি। ফলে এখানে বিস্ফোরণ ঘটার কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। ফলে এটা যে কোনো গ্রহাণু বা এলিয়েনের কারণে ঘটেনি, সেটা নিশ্চিত। তবে কি বৈশ্বিক উষ্ণতা দায়ী? আন্দ্রেই প্লেখানভ জানিয়েছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে এই গর্ত তৈরি হয়েছে কি না, সে বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা করতে হবে।

 

গর্তের রহস্য উদ্ধারে ইয়ামাল কর্তৃপক্ষ, রাশিয়ার সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব দ্য আর্কটিক ও ক্রায়োস্ফিয়ার ইনস্টিটিউট অব দ্য একাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষকেরা কাজ করেছেন। মাটি, পানি ও বাতাস থেকে নমুনা বিশ্লেষণ করে এই রহস্য সমাধান করতে তাঁরা চেষ্টা করেছেন। গবেষক প্লেখানভ অবশ্য এ ধরনের রহস্যময় গুহা বা গর্ত তৈরির বিষয়টি ইয়ামালে আগে কখনো দেখেননি বলেই জানান। তাঁর মতে, এই গুহাটি ইয়ামালের অন্যান্য গর্তের চেয়ে পৃথক। তাঁর ধারণা হচ্ছে, আট হাজার বছর আগে এটি সমুদ্র ছিল। পরে এখানে ভূপৃষ্ঠ তৈরি হয়েছে। আট হাজার বছর আগের পুনরাবৃত্তি ঘটছে এখন। হয়তো অনন্য কোনো প্রাকৃতিক ঘটনা দেখবেন বলে আশাবাদী তিনি।

 

ইউটিউব ভিডিও লিংক: http://www.youtube.com/watch?v=6x5cLwKtJjs

লেখক পরিচিতি
এম, এইচ, মিনহাজ
আমি বিভিন্ন বাংলা/ইংরেজী ব্লগের একজন অনিয়মিত এবং সখের ব্লগার। তবে নিয়মিত লেখার ইচ্ছে থাকলেও অনিয়মিত ভাবেই পাঠকদের বিরক্ত করে থাকি। আমার লেখার বিষয়বস্তু- যা মনে আসে তাই। কারও কাছ থেকে বাহবা পাওয়ার জন্য লিখি না। কেউ আমার লেখা পছন্দ করলে খুশি হই তবে অপছন্দ করলেও লেখালেখি বন্ধ করার কোন অবকাশ নেই, কারন আমি একান্ত সখের বশেই লেখালেখি করি।
আমার ব্লগ সমুহ:

আপনার মতামত দিন