দেখো তুমি আমার পিছে ঘুরোনা,আমি আমার বান্ধুবীকে বলে দিচ্ছি তুমি বরং তার সাথে ভালোবাসা করো ।অপু বিরক্ত হয়ে দু রো আমি ভালোবাসি তোমাকে আমি ওর সাথে ভালোবাসা করতে যাবো কেনো? কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো কংশবালা।আষাঢ় মাস নদীতে পানি টইটুম্বুর ,গ্রামের পাশেই গোরস্থান,গোরস্থানের পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে মাথা ভাঙ্গার ভৈরব শাখা নদী।পানি কি উজ্জল,নদীতে ডুব দিয়ে পানির মধ্যে তাঁকালে মাছ দেখা য়ায়।গোরস্থান আর নদীকে পৃথক করেছে দীপপুর বাসীর রাস্তাটা,তবে গোরস্থান আর নদীর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে আছে এক পুল।আষাঢ় শ্রাবন মাসে পুলের উপর পানি উঠে পড়তো।দীপ পুরের গোরস্থান পাড়ার ছোট ছোট মেয়েরা ওখানে বসে হাড়ি পাতিল,থালা বাসন পরিস্কার করতো।অপু প্রায় সময় ওখানেই বসে থাকতো,অপু অবশ্য আমার সাথে লেখাপড়া করতো।বাবার অবস্থা তেমন একটা ভালো ছিলোনা,এই জন্য নিজে দিন মজুর খেটে লেখাপড়া করতো।অবসর সময়টা গোরস্থানের ওখানে পুলের পাড়ে আর অশথ তলাই কাটিয়ে দিতো।ওদিন বিকালে আমি হাটতে হাঁটতে সুম্বুর বাগানের দিকে যেতেই দেখি অপু ছোট একটা মেয়ে বয়স ছয় থেকে সাত বছর হবে সাথে কথা বলছে।মেয়েটা শ্যাম বর্ণের হলেও দেখতে সুন্দর আর চোখ গুলো বেশ মায়াবী।আমি দাঁড়িয়ে অপুকে বললাম কে রে ওটা? ও আমাকে বললো এই পাড়ার ঐ বাগানীদের মেয়ে।আমি জিজ্ঞাসা করলাম তোমার নাম কি? ও ফিক করে হেসে দাতঁ দিয়ে নখ কেটে বললো কংশবালা।কিরে মুসলমানের নাম আবার কংশবালা হয় নাকি? আমার কথা শুনে মুহুর্তের মধ্যে চেহারাটা লাল করে দেখলাম রাগান্বিত ভাব,গাল ফুলিয়ে বললো না হয় না।কদিন পরে দেখি অপু খালী বাগানীদের বাড়ি ঘুরাঘুরি করে আমি বললাম কিরে এখানে ঘুরাঘুরি করিস কেনো? ও বললো কংশবালার ভাই হেকিম উনার কাছে কিছু তন্ত্রমন্ত্র শিখবো।আসলে কংশবালাকে ওর মনে ধরেছে এটা জানতামনা কিন্ত ওর মনে ধরলে হবে কি, কংশবালাতো এখনো ছোট ওরতো কোন বুঝ হয়নি।কংশবালার ভায়ের কাছে আরো অনেকেই গুরুমন্ত্র শেখার জন্য আসা যাওয়া করে।অপু তেমন একটা সময় পাইনা ও লেখা পড়ার পাশাপাশি কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় সময় বলতে বিকাল আর সন্ধার কিছু সময়।অপুর বাবা মা আবার খুব নীতিবান মানুষ,শাসন কোন অংশে কম না ,ছেলে সন্ধার পর কোথাও থাকুক এটা তারা চাইনা।অপু সামান্য সময়ের মধ্যে কংশ বালা সাথে সাক্ষাৎ করবেই,কংশবালা কিন্ত এসবের কিছুই বোঝেনা।দিন যায় কংশবালা আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠছে,দিন দিন কংশবালার মায়াবিনী বেড়েই চলছে।আরো কয়েকজন ছেলে কংশবালাকে ভালোবাসা শুরু করলো,কংশবালা এখন কি করবে? এখন হইত কংশবালার বুঝার বয়স হয়েছে।কংশবালার বাড়ির লোকেরাও বিষয়টি আঁচ করতে পেরে কংশবালাকে বেনুপুরে তাদের এক আত্মীয়ের বাড়ী পাঠিয়ে দিল।কংশবালা ওখানকার স্কুলে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া শুরু করলো।বেনুপুরে অপুর ফুফির বাড়ী,কদিন পরে আমাকে এসে বলছে দোস একটা ঘটনা শুনেছিস? ও এমনভাবে কথা বলছে মনে হচ্ছে গ্রামে বড় একটা কিছু হয়েছে,না তো কি হয়েছে বল।দোস কংশবালাকে ওর বাবা ভাইরা বেনুপুরে পাঠিয়ে দিয়েছে।আমি কংশবালা কে প্রথমে বুঝতে পারিনি,পরে ও আমাকে মনে করিয়ে দিল,তো তোর কি?না দোস আমার ভালো লাগছেনা,কেন তুই কি ওকে ভালো বাসিস?ওর কোন কথা নেই।বেনুপুর ওর ফুফির বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে ওর খোজ নিলো,জানা গেল হ্যাঁ এই স্কুলে কংশবালা ভর্তি হয়েছে।স্কুলের বাহিরে রাস্তায় অপেক্ষায় আছে কখন কংশবালার স্কুল ছুটি হবে,ঐ সময় কংশ বালার সাথে একটু সাক্ষাৎ করবো।কংশবালা ঐ সময় ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ে,স্কুল ছুটি হলে অন্যান্য ছেলে মেয়েদের সাথে কংশ বালাও আসছে।অপু একটু সামনে এগিয়ে যাচ্ছে কথা বলার জন্য কিন্ত কংশবালা মুখ ফিরিয়ে মাথা নীচু করে চলে গেলো কোন কথা বললোনা।দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ফুফির বাড়ি চলে আসলো,ওর ফুফাত বোন আদীবা কংশ বালার সাথেই পড়ে।একটি চিঠি লিখে ওর হাতে দিয়ে বললো এইটা কংশ বালার বই এর মধ্যে দিয়ে দিবি যেমন কথা তেমন কাজ কিন্ত চিঠির কোন উত্তর আজো পাইনি।অপু মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে ভালোভাবেই পাশ করেছে,একদিকে লেখাপড়া অন্যদিকে সংসারের ঘানী।বাবা যে উপার্জন করে তাতে সংসার চলেনা,অনেকগুলো ভাই বোনের মধ্যে অপু বড় এই জন্য দায়িত্বটাও একটু বেশি।প্রাইভে পড়িয়ে দিন মজুর করে কোন মতে সংসার চলে এমন একটা ছেলেকে কে ই বা ভালো বাসবে? কষ্ট করে আই এ পাশ করেছে,নানা দিকে চাকুরীর জন্যও ঘুরছে কোথাও চাকুরী নেই।হতাশ হয়ে লেখাপড়া ছেড়ে বিবাহশাদী করে সংসারের পরিকল্পনা করার জন্য বাবা মাও উঠে পড়ে লেগেছে।এদিকে কংশবালা গ্রামে চলে এসছে,বেশ ভালই বড় হয়েছে,ভৈরব নদীতে গান্ধি লেগেছে সবাই মাছ ধরতে নেমেছে,কংশবালার ভায়ের কাছে তন্ত্রমন্ত্র শিখতো ঐ ছেলেটার সাথে কংশবালাও নদীতে মাছ ধরতে নেমেছে।ছেলেটা সামনে সিটকী জালে মাছ ধরছে আ র কংশবালা পিছনে মাছের হাড়ি পানিতে ভাসিয়ে টানছে।অপুও পিছনে পিছনে যাচ্ছে।ছেলেটা এক সময় অপুকে বললো এই এটা আমার তুমি ওর দিকে নজর দিবানা।দু এক কথা বলে অপু ওখান হতে চলে আসলো,বিকালবেলা আবার বাগানীদের বাড়ি সরাসরি কংশবালার সাথে কথা বলার জন্য।কংশবালা অপুকে বললো দেখো তুমি আমার পিছনে ঘুরোনা,তুমি ভালোবাসা করতে চাইলে আমি আমার বান্ধুবীকে বলে দিচ্ছি তুমি ওর সাথে ভালোবাসা করো।উপাই না পেয়ে অপু ফিরে আসলো। অপু তার একটা দুঃসম্পর্কের আত্মীয়কে দিয়ে কংশবালার বাবা ভাইদের নিকট বিবাহের প্রস্তাব পাঠালো ,কংশবালার অবিভাবকরা বেকার ছেলে দেখে বিবাহতে রাজী হলোনা।এর কদিন পরেই কংশবালার ভাই এর কাছে যে ছেলেটা তন্ত্রমন্ত্র শিখতো যার পিছে কংশবালা মাছের হাড়ি টানছিলো তার সাথেই কংশবালাকে একপ্রকার জোর করেই বিবাহ দিয়ে দিলো।ঐ ছেলেটাও বেকার তবে তাদের জায়গা জমি আছে এই জন্য বিবাহ দিয়েছে আর কি।আপু নিরাশ হয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত,অপুর বাবা মা বিবাহ করে সংসার করার জন্য পিড়াপিড়ি শুরু করেছে।অপুর খালার বাড়ি চাপড়াই মনটা ফ্রেস করার জন্য কদিন ওখানে বেড়াতে গিয়েছে।অপু একটা সরকারী হাসপাতালে করনিকের চাকুরীর ইন্টারভিউ দিয়েছিলো,অপুর এ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটার বাড়িতে এসছে,দুদিনের ভিতরেই অপুকে জয়েন্ট করতে হবে।বাড়ী আত্মীয় স্বজন সবার মাঝে আনন্দের একটা ছাপ বিরাজ করছে।অপুর মা অবশ্য জানতো যে অপু কংশবালাকে ভালোবাসে,তার মায়ের আশা ছিলো ও হইত কংশবালার সাথেই বিয়ে করবে কিন্ত কংশবালার বিয়ে হয়ে যাবার পর ওর মায়ের অবস্থাটাও তেমন ভালো যাচ্ছিলোনা।যাক এখন ছেলে চাকুরী পেয়েছে এখনতো আর কোন অসুবিধা নেই।অপু চাকুরীতে জয়েন্ট করেছে,অপুর পোষ্টিং হয়েছে চট্টগ্রাম।অপু আমার কাছে চিঠি লিখতো,ও সব সময় গ্রামের লোকজনের খোজ খবর রাখতো পাশাপাশি কংশবালার কথাও বলতো ও স্বামীর বাড়ী কেমন আছে জিজ্ঞাসা করতো।আমি ওকে বলতাম অপু কংশবালা অন্যের স্ত্রী তুমি ওকে মনে রেখোনা,তাছাড়া সেতো তোমার ভালোবাসার মূল্যায়ন করেনি তুমি কেন তাঁকে মনে রাখবে?হ্যাঁ সত্যিইতো কেনো মনে রাখবো?সংগ্রাম ছুটিতে বাড়ী এসছে,বাবা মা পাশের বাড়ীর একটি মেয়ে পছন্দ করেছে,কংশবালার চাইতে সুন্দর এবং বড় লোকদের মেয়ে।গ্রামে অপুর বিবাহের সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছে,কংশবালার কানেও সংবাদ পৌছাতে বাকী নেই।সকালে ঘুরতে ঘুরতে অপু কংশবালাদের বাড়ী, কংশবালা তধন ধারীতে বসে বসে নকশী কাঁথা সিলাই করছিলো।অপুকে দেখে তাড়াতাড়ি করে বসার জায়গা করে দিলো,কি মনো মুগ্ধকর ব্যবহার।সব বাদ দিয়ে অপুর সাথে এখন কথা বলা নিয়ে ব্যস্ত কংশবালা।অপুকে জিজ্ঞাসা করলো মশাই বলেন কি অবস্থা, শুনলাম মৌরানীর সাথে বিবাহ করছো? হ্যাঁ বিবাহতো করতেই হবে,অনেকে বিবাহ করতে চাইনি ওরা যখন করতে চেয়েছে তখন আর বসে থাকবো কেনো।কথাটা আমাকে বলছেন,বুঝতে পারার জন্য ধন্যবাদ।আমরা বাংগালী মেয়ে জীবনের অনেক কিছুই আমাদের অবিভাবকদের উপর নির্ভর করে,আমার অবিভাবক দেইনি এখানে আমার কি করার?আমি তো এ বিষয়ে কৈফিয়ত চাইনি।একটু ও বদলাওনি আগের মতই রয়ে গেছো।কি ভাবে বুঝলে? আগে তো কোন দিন তোমার সাথে কথা বলারই সাহস হয়নি,যখনি কথা বলতে গিয়েছি তখনি গালটা ফুলিয়ে আর একদিকে গেছো।আড়পাটে আড়পাটে শুনতাম,বুঝতে পারিনি।কথার ফাক দিয়ে মৌরানীর আগমন,ঐ যে হবু বধু,মৌরানী ওখানে দেখে কত দ্রুত পথ মাপপে ইয়াত্তা নেই।কিছুক্ষন পর কংশবালার শ্বশুর ওখান দিয়ে মাঠে যাচ্ছিলো,অপু দেখে চমকে উঠলো কংশবালাকে বললো কিরে তোকে আবার কিছু বলবে নাকি? এখানে বলার কি আছে? তুমি আমার গ্রামের ছেলে আমাদের বাড়ী আগেও এসছো,চাকুরী করো দেখা করতে এসছো এখানে বলার কি আছে?নারে ভাই গ্রামের মানুষ বর্তমানে ভালো না তিলকে তাল বানায়।ঠিক আছে সারা জীবন ভালবেসেও এতক্ষন কথা বলতে পারিনি আজ যতটুকু বললাম,তখন সুযোগ ছিলোনা তাই।আগাম বিয়ের দাওয়াত রইল,শুভ দিনটির অপেক্ষায় রইলাম।আমি তখন অপুদের বাড়িতে ওর মা বাবা মুরুব্বিরা এবংমৌরানীর বাবা দাদারা বসে বিয়ের দিন তারিখ নিয়ে কথা বলছে হঠাৎ ডাক পিয়নের হাকাহাকি, অপুর টেলিগ্রাম এসছে জরুরী সরকারী কাজে অপুকে জয়েন্ট করতে বলা হয়েছে।ডেঙ্গু মহামারীর কারণে চিকিৎসা বিভাগের সবার ছুটি সরকার বাতিল করেছে, সকলের মনটা খারাপ হয়ে গেলো,তারপরও কিছু করার নেই রাষ্ট সন্তানদের জীবনে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়।এ পর্বে আর বিবাহ হলোনা।ও কাজে জয়েন্ট করলো, অনেকদিন ওর কোন সংবাদ নেই আমার ও পড়াশুনার অনেক চাপ তার পরও অপুদের বাড়ী গিয়ে অপুর মায়ের সাথে কথা বলি খোজ খবর নিই।জানতে পারলাম আজ রাতে কংশবালার একটি ছেলে হয়েছে,ভালো সংবাদ অপুকে জানানো লাগে,অপুর কাছে বিস্তারিত জানিয়ে একটি চিঠি লিখলাম।অপু পত্র পেয়ে আমাকে হোবল দর্জীর কাছে কংশবালার ছেলের জন্য ভালো দামের কাঁপড় দিয়ে একটা জামা প্যান্ট বানিয়ে রাখার জন্য বলেছে।ও কদিন পরেই ছুটিতে বাড়ি আসবে তখন নিজ হাতে উপহার স্বরুপ দিবে।আমাদের গ্রামে তখন আন্ডার ওয়াল্ড সন্ত্রসীদের দৌরাত্য তুঙ্গে চলছিলো,কেউ শান্তিতে ঘুমাতে পারতো না।যার ঘরে টাকা আছে তাঁকে চাঁদা দিতেই হবে,আর চাকুরীদারদের তো দিতেই হবে।অপুর বাবার কাছে কানে কানে ওরা নাকি আগেই বলে গিয়েছে মাসে দুশো করে দিতে হবে।অপু বিষয়টি জানতো এই ভয়টা অপুর ভিতর ছিলো যার কারণে ও বাড়ী আসতেও দেরী করেছে। একবুক সন্ত্রাসীর ভয় নিয়ে নিজ বাড়ীতে আসা যে মানবতার জন্য কতটা বেদনাদায়ক নরৈাশ্যের হতে পারে তা একমাত্র ভুক্তভোগীরা ছাড়া বোঝা ভার।অপু খব গোপনেই আমাকে নিয়ে কংশবালা ছেলের উপঢৌকন দেবার পালা সেরে ফেললো।অপুর বিয়ের দিনক্ষন ঘনিয়ে এসছে,পাড়াই রং মাখামাখির ধুমধামের অভাব নেই,বিয়ের দিন কংশবালা ছোট ছেলে কোলে নিয়ে বিয়ে দেখতে এসছে,বিবাহের শেষে বিশ টাকা দিয়ে অপু দম্পতির মুখ দেখতেও ভূল করেনি কংশবালা।কোন অদৃশ্য টান হৃদয়ের বদ্ধ কুঠির হতে মাঝে মাঝে উকি ঝুকি দিলেও ভালই চলছিলো দুজনের দাম্পত্য জীবন,দুটি পবিারের সন্তানাদী সব বড় হয়ে গেছে।অপু তখন ঢাকাতে চাকুরী করে,হঠাৎ একটি ফোন অপু বাহিরে ছিলো,চৈত্র মাস ঢাকা শহরের যানজোটে মনটা অতিষ্ট,চিকন একটি কন্ঠ ভেসে আসলো মশাই কেমন আছেন?প্রথমে চিনতে পারে নাই পরে জানতে পারলো কংশবালার নাম্বার,ঠিক আছে আমি বাসায় গিয়ে পরে কথা বলবোনি এখন গাড়িতে আছি।বিবাহ হোক আর না হোক জীবনের প্রথম ভালোবাসার মানুষটি যখন ফোন দেই তখন স্বভাবতই মনের ভিতর একটা মোচড় মারার কথা।অপু বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে কংশবালার নাম্বারে ফোন,রিসিভ করেই আমি পহেলা বৈশাখে ঢাকা আসবো তোমার সাথে কি সাক্ষাৎ করা যাবে? এ রকম প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা অপু,কিন্ত কেনো? আমার একটা জরুরী কাজ আছে তোমার সাথে।আচ্ছা আমি একটু ব্যস্ত তুমি আগামীকাল রাতে এ বিষয়ে একটু ফোন দিও আমি বলবো কি করা যায়।অপু বিষয়টা আমার সাথে একটু শিয়ার করেছিলো,আমি ওকে সাফ জানিয়ে দিলাম অপু তুমি বিবাহিত তোমার সংসার সন্তান আছে,ওর ও সংসার সন্তান আছে।আমি যতটুকু জানি ওর স্বামীর সাথে ওর তেমন বনিবনা হচ্ছেনা,বিষয়টা তোমাকে বলে তোমাকে দুর্বল করতে চাচ্ছে।ওর যে সামাজিক একটা মর্যাদা আছে সেটা ও ভূলে গিয়েছে কিনা জানিনা,তবে তোমার পরিবারের একটা সামাজিক অবস্থান আছে।তুমি এমন কোন কাজ করোনা যা তোমার সন্তান এবং আত্মীয় স্বজনদের ভিতর প্রভাব পড়ে,তুমি এমন কাজ করোনা যার জন্য তোমার সন্তানেরা সারা জীবন মানুষের নিকট মাথা নীচু করে চলে।ঠিক আছে দোস্ত তাহলে আমি আপাতত ওর নাম্বারটা ব্লক করে রাখছি।কংশবালার মনটা মোটেও ভালো না স্বামীর সাথে বনিবনা হচ্ছেনা,কংশবালার ছোট ভাই বিদেশ যাওয়ার জন্য দুই লক্ষ টাকা নিয়েছিল সেটা পরিশোধ না করার কারণে সব ঝাড়ি এখন কংশবালার উপর।ঢাকার এক আদম ব্যাপারী নাকি ওর ছোট ভায়ের টাকাগুলো আত্মসাৎ করেছে, কংশবালা মুলতঃ অপুর কাছেএই জন্যই যেতে চেয়েছিলো যদি কিছু সাহায্য করতে পারে।অনেকদিন আর কোন যোগাযোগ নেই কংশবালা একদিন আমাদের বাড়িতে হাজির,আমার কাছে ওর কোন নুতন নাম্বার আছে কিনা?থাকলেও আমি দিতে নারাজ,একদিন দুইদিন কথা বলা দেখা করা এগুলো পুরাতন আগুনকে উস্কে দেবার মত।আমি কংশবালাকে বুঝালাম এ ব্যাপারে সে তো তোমাকে কোন সাহায্য করতে পাবেনা,তুমি শুধু তার বাসায় থেকে পুলিশের সহায়তায় কাজ করতে পারবে।হ্যাঁ আমি শুধু এই টুকুই চাই,সমস্যাতো এইটুকু নিয়েই।মৌরানী ভাবী ভালো করেই জানে অপু ছোট বেলা তোমাকে ভালো বাসতো,এখন তুমি তার বাসায় যাওয়া মানে তার সংসারে আগুন লাগা।আমাদের বাঙ্গালীদের পারিবারিক বন্ধন প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা ও মানুসীকতাটাই এরকম।তোমার উচিৎ বিকল্প কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা।কংশবালা জলছল আঁখিতে বললো তোমার কথা শুনে আমি হতাশ হলাম।কিন্ত আমি তোমাদের মঙ্গল চাই,যা বলেছি তা তোমাদের মঙ্গলের জন্যই বলেছি।আর এক পা ও দাঁড়ালোনা কংশবালা চম্পাটে চলে গেলো।অনেকদিন আর কোন খোজ খবর নেই,একদিন জানতে পারলাম কংশবালা খুব অসুস্থ একজন বললো ডাক্তার বলেছে ওর নাকি ক্যানসার হয়েছে। অপু আমাকে ফোন দিয়েছিলো,বললাম খবর ভালো না কংশবালার ক্যানসার হয়েছে ওকে ঢাকার কোন হাসপাতালে যেন নিয়ে গেছে। অপু রাতে অফিস শেষ করে বাসায় যাবে,হাসপাতালের সামনেই এ্যাম্বুলেন্স থেকে পরিচিত কিছু লোক ,দৌড়ে গেলো অপু,কংশবালাকে নিয়ে এসছে।সাথে কংশবালার বড় বোন আর বড় ভাই নীল শাড়ীপরা কংশবালার হাসিটা আগের মতই আছে,কেমন আছো? আমার সংবাদ পেয়ে এসেছো?না না আমিতো এখানেই চাকুরী করি।আমার খুব খারাপ লাগছে আমাকে ভর্তি করে আগে বেডের ব্যবস্থা করো।কংশবালাকে ভর্তি করে ডাক্তার দেখাতে দেখাতে অনেক রাত হয়ে গেল,মৌরানী চিন্তা করছে এত রাত কোনদিন হয়না ,ভেবে ফোন দিল,গ্রাম থেকে অসুস্থ লোক এসছে ওদের একটু ব্যবস্থা করছি আর ভাত একটু ধরে রান্না করিও মেহমান আছে।কংশবালার বড় বোন সাথে থাকলো বড় ভাইকে সাথে নিয়ে অপু বাসায়।কৌতুহলী মৌরানী অপুকে বললো কে অসুস্থ?ওনার ছোট বোন তুমি চিনতে পারবা ঐ যে,কংশবালা।তোমার বান্ধবী না? দু রো ও আমার কত ছোট বান্ধবী হবে কেন?কংশবালা বললো যাক কি হয়েছে তাই বলো? ক্যানসার।কি সর্বনাশ,কাল তুমি আমাকে নিয়ে যাবা আমি এখটু দেখবো হাজার হোক আমার গ্রামের মেয়ে।পরদিন মৌরানীকে সাথে নিয়ে অপু হাসপাতালে প্রথমেই কংশবালার ওয়ার্ডে,কংশবালা তখন ফ্রেশ হয়ে ওর বোনের সাথে কথা বলছিলো।ওদের দেখে কংশবালার যেন খুশির সীমা নেই,ওর বোনকে বলছে দেখো ওদের দুজনকে কি সুন্দর মানিয়েছে।মৌরানী ধন্যবাদ দিয়ে ব্যাগ হতে নাস্তা ফল বের করে দিলো,এখন শুরু হলো গ্রামের যত গল্প।কথা বলতে বলতে হঠাৎ বেহুশ কি সর্বনাশ দ্রুত জরুরী বিভাগে নেয়া হলো,ডাক্তার বললো ব্রেন অপারেশন করতে হবে।মৌরানী নিজেকে বড়ই অপাধী মনে করছে,ভাবছে আমি যদি না আসতাম তাহলে হইত এরকম হতো না।এগুলো আমাদের ভূল ধারনা,বিধাতা মানব অছিলার মাধ্যম দিয়ে কর্ম সম্পাদন করান।নাদাবী সনদ নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হলো ,বাহিরে সবাই অপেক্ষমান ঘন্টার পর ঘন্টা অপারেশন চলছে।না শুভ লক্ষন মনে হচ্ছেনা,একে একে সবাই থিয়েটার হতে বেরিয়ে আসছে কেউ কোন কথা বলছেনা,বড় ডাক্তার লাশ পিছনে নিয়ে শুধু বললো দুঃখিত বাঁচাতে পারলামনা।সবার কাঁন্নার সীমা নেই,অপু লাশবাহী গাড়ীর ব্যবস্থা করে দিল,অপু লাশের মাথার দিকে মৌরানী পায়ের দিকে আর ওর বড়ভাই মাঝখানে ধরে লাশ এ্যাম্বুলেন্সে উঠালো।সর্বশেষ লাশের পাশে দাঁড়িয়ে দুফোটা শেষ চোখের পানি ফেলে কংশবালাকে নিরন্তর বিদায় জানালো ।
আপনার মতামত দিন